দীর্ঘদিন ধরেই ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি চালুর দাবি অভিভাবক ও শিক্ষকদের। তবে তা নিয়ে তেমন তোড়জোড় ছিল না সংশ্লিষ্টদের। এবার তোড়জোড় শুরু করেছে শিক্ষা প্রশাসন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিতে চায় সরকার। ইতিমধ্যেই উপবৃত্তি প্রদানের খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। ১ থেকে ২ মাসের মধ্যেই উপবৃত্তি চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছে প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের প্রস্তাব চলতি বছরের জুলাইয়ে অনুমোদন দিয়েছেন।
বহু বছর ধরে সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেয়ে আসছেন।
ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা গত অর্থবছর থেকেই মেধাবৃত্তি পেয়ে আসছে। এই শিক্ষার্থীদের দেখভালের দায়িত্ব মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের। প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে।
উপবৃত্তি প্রদানের প্রক্রিয়া চলে আসছে কয়েক বছর ধরেই। শিক্ষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতির। যে কাজ করতে সর্বোচ্চ ছয় মাস লাগে, দুই-তিন বছরেও শেষ হয়নি। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে স্বীকৃত ইবতেদায়ী মাদ্রাসার তথ্য চাওয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এই তথ্য প্রেরণের পর পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় থেকে তা যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
তথ্যমতে, দেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাদ্রাসা রয়েছে ৬ হাজার ৯৯৮টি। তবে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ৩ হাজার ৪৩৩টি। এরমধ্যে অনুদান পাওয়া মাদ্রাসার সংখ্যা ১ হাজার ৫১৯টি। তবে বর্তমানে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা রয়েছে ১ হাজার ৭৯টি। ব্যানবেইস’র ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে চলমান তিন হাজার ৮৩৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন। শিক্ষক ২০ হাজার। তবে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশে ৭ হাজার ৪৫৩ টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা চলমান রয়েছে। সে হিসাবে এসব মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। আবার মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার মধ্যে মোট এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান ৮ হাজার ২২৯টি। এসব মাদ্রাসায় সংযুক্ত ইততেদায়ী মাদ্রাসাও এমপিওভুক্ত। এছাড়াও রয়েছে নন-এমপিও মাদ্রাসা।
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত হয় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানে শুরু থেকেই প্রত্যেক শিক্ষককে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করা হলেও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা বেসরকারিই থেকে যায়। আবার দাখিল মাদ্রাসার সঙ্গে সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হিসেবে বেতন-ভাতার সরকারি অংশ শতভাগ পাচ্ছেন। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পাচ্ছেন আড়াই হাজার টাকা করে। আর সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন মাত্র ২ হাজার ৩০০ টাকা করে। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিও দীর্ঘদিনের। একাধিকবার আন্দোলনও করেছেন তারা।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের সভাপতি কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবার দাবি দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন যেহেতু দিয়েছেন আশা করি খুব শিগগিরই বৃত্তি পাবে শিক্ষার্থীরা।
এক ইবতেদায়ী শিক্ষক বলেন, আমাদের বেতন-ভাতার দাবি দীর্ঘদিনের। আমাদের বিভিন্ন সময়ে আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি। সেইসঙ্গে উপবৃত্তি না থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী মাদ্রাসা থেকে ঝরে পড়ছে। আমাদের মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক একদিন আমাদের ডেকে বললেন, দুই-এক মাসের মধ্যেই উপবৃত্তি দেয়া হবে। সরকার আমাদের বেতন-ভাতার বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব সহকারে না দেখলেও উপবৃত্তির বিষয়টি দেখছে। কারণ এর মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক অভিভাবককে খুশি করানো যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন বলেন, উপবৃত্তির তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। তিনি অনুমোদনও দিয়েছেন। এরপর নীতিমালা প্রণনয়নের কাজ চলছে।
অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু নঈম বলেন, উপ-বৃত্তির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এতে তারা নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। এরপর আমাদেরকে একটা নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। আমরা নীতিমালা- কীভাবে দেবো, কারা সুবিধাভোগী হবেÑ এসব বিষয় নিয়ে একটা খসড়া তৈরি করেছি। এটা নিয়ে গত সপ্তাহে একটা বৈঠকও হয়েছে। এরপর এই খসড়া এ সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। এটা অনুমোদন হলেই উপবৃত্তি দেয়া শুরু করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, আশা করছি এক মাসের মধ্যেই উপ-বৃত্তি দেয়া শুরু করতে পারবো।