ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠ সদৃশ’ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলাপনের তিনটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে।
ওই ক্লিপগুলোতে এক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যা ও পরবর্তী নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অডিওতে প্রার্থীকে বোর্ডের প্রশ্ন সরবরাহ ও কিভাবে লিখতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ট্রেজারের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ ও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে বোর্ডের আয়োজন ও বোর্ড সম্পন্ন করতে টাকার বিনিময়ে বোর্ডে তিনজন সদস্য রেডি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার দিনের বিভিন্ন সময় ‘ফারাহ জেবিন’ নামক এক ফেসবুক আইডি থেকে অডিও তিনটি পোস্ট করা হয়। যার প্রথমটি ৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের, দ্বিতীয় ১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড ও তৃতীয়টি ২মিনিট ১৯ সেকেন্ডের।
অডিও তিনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের বিষয় নিয়ে ও পরবর্তী বোর্ড নিয়ে নিয়োগপ্রার্থী ও বর্তমানে ওই বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক অলিউর রহমান অলির সঙ্গে আলাপন হয়। তবে অডিওতে অন্যপ্রান্তে থাকা ব্যক্তির কথা শোনা যায়নি।
গত ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন এন্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে আবেদনকারীরা হলেন ড. মো অলিউর রহমান, মোশারফ হোসেন ও বিউটি মণ্ডল। এ সময় বোর্ডে তিনজন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় বোর্ড স্থগিত হয়। পরে গত ২ ডিসেম্বর আবারো পুনর্বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি বোর্ডটি অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে পূর্বেই জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রথম অডিও ফাঁস হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাতে ইবি থানায় ভিসির নির্দেশে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান বলেন, ভিসি স্যার আমাকে জিডি করতে বলেছেন, তাই ইবি থানায় জিডি করেছি। অডিও পোস্টদাতার একাউন্টটি আইডেন্টিফাই করতে জিডি করা হয়েছে। অডিও কার এটা তো আমি জানি না, এটা প্রশাসন বের করবে।
পোস্টদাতা প্রথম অডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘গত ২৫ অক্টোবর ২০২২ গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় তার পছন্দের প্রার্থী অলিউর রহমান অলিকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হওয়ার পুনর্বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেই প্রার্থীকে আবার নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশ্ন সরবরাহ করছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।
ওই অডিওতে ভিসির কণ্ঠ সদৃশ কথায় বলা হয়েছে, ‘একটি বোর্ড স্থগিত হওয়ায় ফোনের অপর প্রান্তের অলি নামের এক ব্যক্তিকে বোর্ডে তিনজন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়াও বোর্ড স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যা করে বোঝানো হয়েছে। তিনজন প্রার্থী থাকলে কোনো সমস্যা হতো না। একইসঙ্গে হতাশ না হয়ে দ্রুত ৩০ তারিখের পরই পুনর্বিজ্ঞাপনে দিয়ে বোর্ড করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
এখানে অপর ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে তিনজন ক্যান্ডিডেট ম্যানেজ করা এবং তারা শুধু বোর্ডে অংশ নিবে। বিষয়টি নিয়ে ট্রেজারারের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয় অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে। অডিওটির শেষাংশে আকার ইঙ্গিত দিয়ে বোঝানো হয়েছে ‘আচ্ছা আপনি সব দিয়ে রেডি থাকেন। যেদিন সব দিয়ে দিবেন তার ঠিক একুশ দিনের মাথায় সবকিছু গোছায় দিব।’
অডিওর দ্বিতীয় পর্বের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে- ‘এভাবেই নিয়োগ বোর্ডের আগে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করেন ড. শেখ আবদুস সালাম।’ ওই অডিওর ভাষ্য মতে- অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে, কোন কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসবে। কিভাবে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কতটুকু কোন বিষয়ে লিখতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় পর্বেও অডিওটি বিশ্লেষণে বোঝা যায়- অডিওতে পরীক্ষায় কোথা থেকে প্রশ্ন আসবে সেই সোর্স এবং উত্তর ইংরেজিতে লেখার প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ট্রেজারারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাকে বুঝায়ে বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অডিও পোস্টের ক্যাপশনে অডিওতে সরবারহকৃত প্রশ্নগুলো নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরিপ্রত্যাশী অলিকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন নূর জায়েদ বিপ্লব বলেন, শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জিডি করেছেন। সেখানে একটি আইডি থেকে ভিসির ‘কণ্ঠ সদৃশ’ অডিও ফাঁস হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক অলিউর রহমানের সঙ্গে এ কথা বলেছি। তবে ভাইরাল হওয়া অডিওটি তার কিনা এ বিষয়ে তিনি সদুত্তর দেননি।