দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেছেন, ইসরায়েলে ইরানের নজিরবিহীন আক্রমণ সারা বিশ্বে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এ আক্রমণের পরেই বিশ্ব নেতারা যেভাবে ইসরায়েলকে সংযত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে আপাতত বড় ধরনের কোনো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা নেই। তবে যে কোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে। এই জায়গায় যদি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বেধে যায়, পুরো বিশ্বে দুর্যোগ নেমে আসবে। বাংলাদেশেও এর ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব পড়বে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
তিনি বলেন, একটা যুদ্ধ যে মানুষের জীবনযাপনের ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা অনুমানের জন্য আমরা ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে তাকাতে পারি। সেই যুদ্ধের মারাত্মক বিরূপ প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছিল। আমাদের এখানেও সবকিছুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। তার থেকেও বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে। এর প্রধান কারণ হলো- ভৌগোলিকভাবে পারস্য উপসাগরের পাড়ে যেখানে ইরানের অবস্থান, সেখান দিয়ে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জ্বালানি সরবরাহ হয়। ইরানের জলসীমার মধ্যে থাকা হরমুজ প্রণালির যে অংশ দিয়ে এই বাণিজ্যিক জাহাজগুলো চলাচল করে সেটা মাত্র ৬ কিলোমিটার। এটা সম্পূর্ণ ইরানের নিয়ন্ত্রণে।
সুতরাং সেখানে যুদ্ধ বেধে গেলে এই প্রণালিটি যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ-ভারতসহ সারা বিশ্বেই জ্বালানি সংকট দেখা দেবে। এতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সবকিছুর ওপরে এর অভিঘাত পড়বে। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধা বা না বাধার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই মন্তব্য করে মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, ইসরায়েলও আমাদের ওপরে কোনোভাবে নির্ভরশীল নয়, ইরানও নির্ভরশীল নয়। তাদের সঙ্গে আমাদের সেভাবে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই। তারা তো আমাদের কাছে শুনে কিছু করবে না। ইসরায়েল নির্ভরশীল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে, ইউরোপের ওপরে। তাদের কথা শুনতে পারে। তাই যুদ্ধের বিষয়টা অনেকখানি নির্ভর করছে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর ওপরে। বৃহৎ শক্তিবর্গের নেতারা যুদ্ধ থামাতে চেষ্টা করছেন। তারা সে প্রচেষ্টায় কতটুকু সফল হয় সেটাই দেখার বিষয়। আমাদের জায়গা থেকে প্রত্যাশা হলো যাতে যুদ্ধ না বাধে।
তিনি বলেন, আমরা ইরান থেকে সেভাবে তেল বা অন্যান্য পণ্য আমদানি করি না। তবে আমরা কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব থেকে তেল আনি। আর এই জায়গাগুলোও যুদ্ধ এলাকার ভিতরে। তাই যুদ্ধ বাধলে জ্বালানি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এখানে আমাদের অবস্থানটা বরাবরের মতো শান্তির পক্ষে। আমরা যুদ্ধ চাই না। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমরা আমাদের ওই অবস্থানটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রকাশ করতে পারি। এটা নিয়ে যদি জাতিসংঘে ভোটাভুটি হয়, অবশ্যই বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে অবস্থান নেবে।