দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছে। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এমন কয়েকজন কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইসরায়েল তাদের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে। তবে ওয়াশিংটন এই হামলার বিষয়টিকে সমর্থন করেনি।
এনবিসি এবং সিএনএন উভয়ই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েল ওয়াশিংটনকে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছে। এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করেনি।
তবে হোয়াইট হাউজ এবং পেন্টাগন এখনও ওই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও ইরান বলছে, কয়েকটি ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এগুলো তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে দেশটির এক কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন গণমাধ্যমের খবর সত্য নয়।
ইরানের চালানো হামলার জবাব দিতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত শনিবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তেহরানের ওই হামলার জবাব দেওয়া হবে এমনটা আগেই স্পষ্ট করেছিল তেল আবিব। পুরো সপ্তাহজুড়েই ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন দেশটির সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছিল যেন ইরানি হামলার জবাবে বড় ধরনের পাল্টা হামলা চালানো না হয়।
যদিও ইরানের হামলা রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কারণ ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো এ ধরনের হামলা চালিয়েছে তেহরান। কিন্তু সেটাও আসলে ছিল একটা প্রতিশোধ। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
এদিকে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজ এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের একটি স্থানে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইরানের ইসফাহান বিমানবন্দরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে কী কারণে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
ইরানের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইবারস্পেস’-এর পক্ষ থেকে ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে সংস্থাটির মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান বলেছেন, ইসফাহান বা দেশের অন্য কোনো জায়গায় সীমান্তের বাইরে থেকে কোনো হামলা হয়নি। তিনি বলেন, ইসরায়েল কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) পাঠানোর ব্যর্থ ও বিব্রতকর একটি প্রয়াস চালিয়েছে এবং সেসব ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও একই ধরনের রিপোর্ট করেছে। তারা জানিয়েছে, দেশের ভেতরের একাধিক অঞ্চলে ডিফেন্স সিস্টেম কার্যকর করা হলেও কোনো সংঘাত বা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়নি।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ঘনিষ্ঠ আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ইসফাহানের পারমাণবিক কার্যক্রমের কেন্দ্র সম্পূর্ণ নিরাপদ।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, এ ব্যক্তি ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্রের অনেকটা কাছে দাঁড়িয়ে তার ঘড়ি পরীক্ষা করছেন। তখন আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকেও দেখানো হয় যারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি যানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে মনে হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ইসফাহান নিউক্লিয়ার টেকনোলজি সেন্টারে একটি ইউরেনিয়াম কনভার্সন ফ্যাসিলিটি (ইউসিএফ) রয়েছে, যা ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড তৈরি করে।
ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড নিউক্লিয়ার চুল্লির জ্বালানিতেও ব্যবহার করা যায়। আবার এটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে।
ইউসিএফ-এর পাশে একটি ইউরেনিয়াম অক্সাইড পাউডার প্ল্যান্ট (ইইউপিপি) আছে, যা ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইডকে ইউরেনিয়াম অক্সাইডে রূপান্তর করে ও জ্বালানি তৈরি করে।
ইউরেনিয়াম অক্সাইড আবার ইউরেনিয়াম ধাতুতেও রূপান্তরিত হতে পারে। ইরান বলেছে যে, তারা চুল্লির জ্বালানি তৈরিতে ইউরেনিয়াম ধাতু ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এই ধাতু পারমাণবিক বোমার মূল তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কেন্দ্র বলা হয় ইসফাহান শহরকে। রয়টার্স জানিয়েছে যে, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বিবেচিত নাতাঞ্জসহ ইসফাহান প্রদেশে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক সাইট রয়েছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইসফাহান ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কেন্দ্রস্থল। প্রশিক্ষণ, গবেষণা থেকে শুরু করে দেশটির পারমাণবিক সামর্থ্য বাড়ানোর সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় এখানে।
সুতরাং এটি ইসরায়েলের হামলার একটি সম্ভাব্য জায়গা। কারণ ইসরায়েলিদের সবচেয়ে বড় ভয় ইরানের বর্তমানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়, ভবিষ্যতে পারমাণবিক হামলার আশঙ্কা।