মধ্যপাচ্য থেকে দূর প্রাচ্য- সর্বত্রই এখন টানটান উত্তেজনা। ধুরু ধুরু বুকে চলছে আলোচনা; সত্যিই কি তা হলে সরাসরি যুদ্ধে জড়াচ্ছে ইরান-ইসরাইল। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলার পর এবার চিরশত্রু ইরান ও ইসরাইল মুখোমুখি। নির্দয় আর সুনির্দিষ্ট প্রতিশোধমূলক হামলায় তেল আবিবকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার হুঙ্কার দিয়েছে তেরহান। বলেছে প্রস্তুত হও- এবার তোমাদের রক্ষা নেই।
বীর সেনানীদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে, ইসরাইলে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইরান। সেই আশঙ্কায় ইসরাইলে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। সেখানে নতুন এক যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও কাঁপছে। সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে ওয়াশিংটন। তাই তেহরানের হাতে পায়ে ধরেছে, তাদেরকে যেন মারা না হয়। জবাবে ইরান বলছে, বাঁচতে চাইলে ইসরাইল থেকে দূরে থাকো, তাহলেই রক্ষা, না হলে নয়।
ইরান জানিয়েছে, ইসরাইলে হামলার জন্য প্রস্তুত তাদের সামরিক বাহিনী। রাখা হয়েছে হাই এলার্টে। শুধু হুকুমের অপেক্ষায়, এর পরেই অভাবনীয় আক্রমণ শুরু হবে ইসরাইল। পৃথিবীর বুকে থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ইহুদি রাষ্ট্র। কখন-কিভাবে-কোথায় হামলা শুরু হবে তা নিয়ে চলছে কানাঘুষা। আর ইরানের সামনে ইসরাইল কতক্ষণ টিকবে তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ।
গেলো কয়েক দশক ধরেই সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হয়েছে ইরান ও ইসরাইল। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্যমতে, ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরান ১৪তম আর ইসরাইল ১৭তম অবস্থানে রয়েছে। ফলে হিসাবটা বরাবর, সামরিক শক্তিতে ইসরাইলের থেকে তিন ধাপ এগিয়ে ইরান। তবে এতো শুধু সামরিক শক্তি, কিন্তু মানসিক শক্তির হিসাব কে দেবে? নিঃসন্দেহে সাহসের দিক থেকে অনেক এগিয়ে ইরান।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, ইরানের ৬ লাখ ১০ হাজার নিয়মিত সেনা রয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইলের রয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার সেনা। তবে রিজার্ভ সেনার দিক দিয়ে এগিয়ে ইসরাইল। তাদের হাতে আছে আরও চার লাখ ৬৫ হাজার সেনা।। অন্যদিকে ইরানের রিজার্ভ সেনা তিন লাখ ৫০ হাজার। তবে এনিয়ে অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞর ভিন্নমত রয়েছে। বলছেন, ইরানের প্রকৃত সেনা সংখ্যা জানা সম্ভব নয়।
আধাসামরিক বাহিনীর দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছে ইরান। দেশটিতে ২ লাখ ২০ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য রয়েছেন; বিপরীতে ইসরাইলের রয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার সেনা। যা যুদ্ধক্ষেত্রে বিশাল বড় পার্থক্য এনে দিতে পারে। ইসরাইলের হাতে কিছু কিছু যুদ্ধাস্ত্র বেশি থাকলে, ইরানের সার্বিক সমর শক্তির তুলনায় সেটি তেমন কিছু নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে ইরানের সবচেয়ে যুদ্ধাস্ত্র- ইমান।
ইরানের ৫৫১টি সামরিক উড়োজাহাজের বিপরীতে ইসরাইলের রয়েছে ৬১২টি। আমেরিকার কল্যাণে তেল আবিবের কাছে আছে ২৪১টি যুদ্ধবিমান, আর তেহরানের কাছে আছে ১১৬টি। হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান ইসরাইলের ৩৯টি আর ইরানের রয়েছে ২৩টি। অন্যদিকে পরিবহন উড়োজাহাজে এগিয়ে রয়েছে ইরান। দেশটির ৮৬টি, আর অন্যদিকে ইসরাইলের রয়েছে ১২টি।
হেলিকপ্টারে এগিয়ে ইসরাইল। দেশটির ১৪৬টি হেলিকপ্টারের বিপরীতে ইরানের বহরে রয়েছে ১২৯টি । এ ছাড়া ইরানের ট্যাংক রয়েছে এক হাজার ৯৯৬টি। অন্যদিকে ইসরাইলের রয়েছে এক হাজার ৩৭০টি। সমর যানেও এগিয়ে ইরান। দেশটির ৬৫ হাজার ৭৬৫টি সাঁজোয়া যানের বিপরীতে ইসরাইলের রয়েছে ৪৩ হাজার ৪০৩টি। এ ছাড়া সাবমেরিন রয়েছে ইরানের ১৯টি। অন্যদিকে ইসরাইলের রয়েছে মাত্র পাঁচটি।
এসব ছাড়াও ইরান-ইসরাইলের রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দেশ দুটির হাতে রয়েছে বিভিন্ন পাল্লার মিসাইল ও হামলার কাজে ব্যবহার করা যায় এমন বহু ড্রোন। ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক বোমা থাকলেও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলে না দেশটি। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ইরান সত্যি সত্যি সরাসরি আক্রমণে যায়, তাহলে সে একা যাবে না, ইসরাইলকে তিন দিক থেকে টুটি চেপে ধরবে দেশটি।