উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুখ্য কর্মকর্তা নন। উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারাকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ তথ্য রয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ রায় প্রকাশ করেন।
১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা ২০১১ সালে সংশোধনী আনা হয়। সংশোধনীত আইনের ৩৩ ধারায় বলা হয়েছিল, (ক) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। (খ) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধিতে নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলী পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন।
এক রিটের ভিত্তিতে এই ৩৩ ধারা কেন বাতিল করা হবে না, এই মর্মে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি রুল জারি করেন আদালত। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ সেপ্টেম্বর পরিষদ আইন ১৯৯৮ এর ধারা ১৩ (ক) ১৩ (খ) ও ১৩ (গ) কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না, তা জানতে চেয়ে আরেকটি বেঞ্চ রুল জারি করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুন উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ক্ষমতা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। একই বিষয়ে পৃথক তিনটি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২৯ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩৩ ধারা বাতিল করে রায় দেন।
২৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন- আইনের এমন বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অসাংবিধানিক। এর কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা জাতীয় সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ না করে প্রশাসনকে (ইউএনওদের) দিয়েছে, যা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পরিষদ এবং সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
অতএব উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা (যা ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের আইন নং ২১ অনুযায়ী সংশোধিত) সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাতিলযোগ্য। উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ২৬ ধারা লঙ্ঘন করে উপজেলা পরিষদের জায়গায় ইউএনও কর্তৃক তাদের চিঠিপত্রে উপজেলা প্রশাসন পরিভাষাটির ব্যবহার করা হয়। এতদ্বারা বৈধ কর্তৃত্ব ছাড়াই তা ঘোষণা করা হয়। তাই এর কোনো আইনি প্রভাব নেই।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারাকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় গত ৫ এপ্রিল স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালত।