গাজীপুরের কালীগঞ্জের জামালপুর ডিগ্রি কলেজে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন সাফওয়ান ভাঙ্গী। পাঁচ বছর বয়সে বাবা মারা গেলে মা মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে অনেক কষ্টে তাঁকে পড়ালেখা করান। সাফওয়ান নিজেও মানুষের বাড়িতে কাজ করে জমান সাড়ে চার হাজার টাকা। পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহ তাঁর।
কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গেলে উপাধ্যক্ষ সামসুল আলম জানান, ১০ হাজার টাকার কমে হবে না। অনেক অনুনয়-বিনয়েও কাজ হয়নি। তাই ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি সাফওয়ান। উপজেলার বালুয়াভিটা এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের মৃত ছানাউল্লাহ ভাঙ্গীর ছেলে সাফওয়ান ভাঙ্গী।
শুধু সাফওয়ান নন, এ কলেজের আরো অনেক শিক্ষার্থী অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার শিকার। সরকারি বিধি উপেক্ষা করে উপবৃত্তিভোগী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভর্তি ফি, সেশন ফি, মাসিক বেতন ও বিভিন্ন পরীক্ষার ফি বাবদ টাকা নিলেও রসিদ দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে গত সপ্তাহে কলেজ পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ৪০ শিক্ষার্থী।
মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাছুম মিয়া বলেন, ‘অফিস সহকারী মো. লিটন ও রুবেল মিয়া উপবৃত্তিভোগী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন আদায় করলেও কোনো রসিদ প্রদান করছেন না। ভর্তি ও ফরম পূরণের জন্য ছয়-সাত হাজার টাকা নিলেও রসিদে মাত্র তিন হাজার টাকা লেখেন। বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানালেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। বাধ্য হয়ে আমরা পরিচালনা কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করেছি। ’
সাফওয়ানের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ না করতে পারার বিষয়ে উপাধ্যক্ষ সামসুল আলম বলেন, ‘আমি ১০ হাজার টাকা চাইনি। বলেছি, যা এনেছ দিয়ে যাও। ’
অতিরিক্ত ফি, উপবৃত্তিভোগীদের বেতন আদায়সহ অন্যান্য বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আনন্দ চন্দ্র দাস বলেন, ‘উপবৃত্তিভোগী কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক বেতন নেওয়া হলে এবং রসিদ দেখালে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ’ রসিদ দেওয়া হয় না জানালে তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অসত্য অভিযোগ করেছে। ’
কলেজটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগটি এখনো তাঁর কাছে পৌঁছায়নি। অভিযোগ সত্য হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূরে জান্নাত বলেন, ‘উপবৃত্তিভোগী শিক্ষার্থীরা আবেদন করলে কলেজ কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য। ’