সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম তার বক্তব্যে বলেছেন, এ মুহূর্তে দক্ষ সরকার দৃশ্যমান হওয়া জরুরি। একইসঙ্গে নতুন নেশনের ভিশন স্পষ্ট করতে হবে। সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সেতু হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে সংবাদমাধ্যম।
সম্পাদক পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সম্প্রতি মতবিনিময় সভা আয়োজিত হয়েছে। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি ও সমন্বয়ক কমিটির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আশ্বস্ত করে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, গণমাধ্যমও সংস্কার ও নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থেকে কাজ করতে চায়।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কীভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামকরণ হলো, কীভাবে আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছিলো তা বিস্তারিত আলোচনা করেন। বাংলাদেশকে কেন্দ্রে রেখে কীভাবে একটি ইনক্লুসিভ সোসাইটি করা যায় সে লক্ষ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার বক্তব্যে প্রিন্ট পত্রিকার প্রশংসা করে বলেন, জুলাইয়ের কঠিন দিনগুলোয় যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় সঠিক খবর পাওয়া যাচ্ছিল না তখন প্রিন্ট পত্রিকাই ছিল ভরসা। অনেকদূর হেঁটে প্রিন্ট পত্রিকা সংগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি।
লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, গণ-অভ্যুত্থান ছিলো একটি সমন্বিত প্রয়াস। নব্বইয়ে যে একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছি্লো তা ওয়ান-ইলেভেনে ভেঙে যায়। তখন থেকে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গা ধূলিসাৎ হয়েছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধনে সব স্তর থেকেই লড়াই হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাহফুজ আলম আরো বলেন, আমাদের জনগণ অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। কিন্তু সকলকে এক বলয়ে নিয়ে আসার অপচেষ্টার ফলে এই ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। নতুন বাংলাদেশে সবাইকে কীভাবে ধারণ করা যায় সেটাই এখনকার আলোচনা।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে কীভাবে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হলো তা অনুসন্ধানের পাশাপাশি দেশকে একটি সভ্যতাগত রূপান্তরের (সিভিলাইজেশনাল ট্রান্সফরমেশন) মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। এখনও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা রয়ে গেছে, এর বিলোপ করে নতুন বন্দোবস্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম তার বক্তব্যে বলেন, 'এ মুহূর্তে দক্ষ সরকার দৃশ্যমান হওয়া জরুরি। একইসঙ্গে নতুন নেশনের ভিশন স্পষ্ট করতে হবে। সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সেতু হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে সংবাদমাধ্যম।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আশ্বস্ত করে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, 'গণমাধ্যমও সংস্কার ও নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থেকে কাজ করতে চায়।'
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে সব ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিলের আহ্বান জানান তিনি। দেশের রূপান্তরমূলক এ যাত্রায় অংশীদার হতে চায় সম্পাদক পরিষদ।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি থেকে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (নাসির আব্দুল্লাহ), আকরাম হুসাইন, ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান, মামুন আব্দুল্লাহিল ও আরিফুল ইসলাম আদীব, সমন্বয়কদের মধ্যে সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ এবং নাগরিক কমিটি থেকে প্রতিনিধি হিসেবে সামান্তা শারমীন উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন, সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম।