এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষার খাতা নিয়ে ‘ছিনিমিনি খেলার’ অভিযোগ উঠেছে মো. আবু তাহের নামে এক পরীক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি তার অবৈধ কোচিংয়ে পড়তে আসা রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের নিয়ে ওই খাতাগুলো মূল্যায়ন করিয়েছেন। দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে বিষয়টি উঠে এসেছে।
জানা গেছে, শিক্ষক মো. আবু তাহের রাজধানীর বাড্ডার ন্যাশনাল কলেজের কর্মরত। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজির পরীক্ষক। তার পরীক্ষক কোড ২৪৯০।
ওই শিক্ষকের কোচিং শিক্ষার্থীদের দিয়ে এইচএসসির খাতা দেখানোর এ ঘটনা নিয়ে শিক্ষা প্রশাসন ও শিক্ষা বোর্ডগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। অসন্তোষ চলছে নটরডেম কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ন্যাশনাল কলেজেও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক আবু তাহের ব্যাচ করে ছাত্রীদের কোচিং করান। তার কাছে ইংরেজি পড়তে আসেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির কিছু ছাত্রী। যাদের দিয়ে এইচএসসির খাতা মূল্যায়ন করিয়েছেন তিনি। ভিকারুননিসার সেসব ছাত্রী ওস খাতা নিয়ে ফটোসেশনও করেছেন। তাদেরই একজন ঘটনাটি তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ভাইকে জানান। তার ভাই নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি দাবি করেছেন, খাতাগুলো নটর ডেম কলেজের বলে ওই শিক্ষক তার কোচিংয়ের ছাত্রীদের জানিয়েছেন। ওসব খাতায় কম নম্বর দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বোর্ডের কয়েকজন অভিজ্ঞ পরীক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তারা এ বিষয়ে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, পাবলিক পরীক্ষার খাতা অন্য কাউকে দিয়ে মূল্যায়ন তো দূরের কথা, সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য পরীক্ষক তার স্ত্রীকেও বলতে পারবেন না। পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য কাউকে বলা বা কোনো তথ্য কারো সঙ্গে শেয়ার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছে, বিষয়টি ইতোমধ্যে বোর্ড কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। পরীক্ষক আবু তাহেরকে শোকজ করা হবে। আর ফিরিয়ে আনা হয়েছে ওইসব খাতা। অভিযুক্ত আবু তাহের বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেছেন, তিনি ছাত্রীদের দিয়ে ওএমআরের বৃত্ত ভরাট করিয়েছেন। মনে হচ্ছে, ওই পরীক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত করবে বোর্ড। তিনি আর খাতা দেখার দায়িত্ব পাবেন না।
ওই খাতাগুলোর মূল্যায়নে প্রধান পরীক্ষকের দ্বায়িত্বে ছিলেন ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যাপক ড. মো. ইহলাম হোসাইন। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। পরীক্ষকরা খাতা দেখে প্রধান পরীক্ষকের কাছে পাঠাবেন। তবে বোর্ড থেকে আমাকে জানানো হয়েছে ওই খাতাগুলো আমরা কাছে আসবে না। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
কোচিংয়ের ছাত্রীদের দিয়ে এইচএসসির খাতা দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনো পরীক্ষক পাবলিক পরীক্ষার খাতা অন্য কাউকে দিয়ে মূল্যায়ন করতে দিতে পারেন না। কেউ যদি এমনটা করেন তাকে কলো তালিকাভুক্ত করা হবে। তিনি আর পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পাবেন না। এ ঘটনার প্রমাণ পেলে কোনো মামলা হবে কি-না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আবু তাহেরের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। কয়েকবার সংযোগ পাওয়া গেলেও কিছুক্ষণ পর ফোনটি ‘সুইচড্ অফ’ পাওয়া যায়।
ন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের সঙ্গে তার দাপ্তরিক মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।