কতিপয় ছাত্রের আন্দোলনের মুখে মাঝপথে বাতিল হওয়া চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তুতি শুরু করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। আগামী মাসে (অক্টোবর) এই ফল প্রকাশ হতে পারে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন, যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর খাতা মূল্যায়ন করে এবং বাকি বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই এ প্রক্রিয়ায় ফল প্রকাশ করা হবে।
বোর্ড সূত্র বলেছে, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোতে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের গড় করা হবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জেএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ৭৫ শতাংশ নম্বর যোগ করে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থীকে নম্বর দেওয়া হবে। যেমন গণিতে কেউ জেএসসিতে ১০০ নম্বর পেয়ে থাকলে সেখান থেকে ২৫ এবং এসএসসিতে ১০০ নম্বর পেয়ে থাকলে ৭৫ নম্বর নেওয়া হবে। এ দুটি নম্বর যোগ করলে এইচএসসিতে গণিতে ওই শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর হবে ১০০।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হওয়ায় সব পরীক্ষার্থীকে পাস করানো হয়। তখন এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল। পরের বছর কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে বাকি বিষয়ের ফল একইভাবে তৈরি করা হয়েছিল।
শিক্ষা বোর্ড থেকে এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল প্রকাশের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার নিশ্চিত করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে ফল প্রকাশসংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই চলছে। শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী সাড়ে ১৪ লাখ। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই। স্থগিত হওয়ার আগে ছয় থেকে সাতটি পরীক্ষা হয়েছিল। বাকিগুলো হওয়ার আগেই স্থগিত হয়েছে। ব্যবহারিক পরীক্ষাও হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে কয়েক দফা স্থগিত হওয়ার পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো শুরুর কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামলে অন্তর্বর্তী সরকার পরীক্ষার সময় আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে এবং নম্বর কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গত ২০ আগস্ট কয়েক শ পরীক্ষার্থী নজিরবিহীনভাবে সচিবালয়ে ঢুকে পরীক্ষা না দেওয়ার দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনই সরকার তাঁদের দাবি মেনে নেয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা যায়, ২২ আগস্ট শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সভায় যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে সেগুলোর নম্বর দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য গত সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি অনুমোদন দিলে সে অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা বোর্ডের সূত্র জানায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল অক্টোবরে প্রকাশের প্রস্তুতি শুরু করেছে বোর্ডগুলো। এ জন্য যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর খাতা মূল্যায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ জোরেশোরে চলছে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সাবজেক্ট ম্যাপিং করে সেগুলোতে নম্বর দেওয়ার অংশ হিসেবে পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার নম্বরপত্র ও প্রবেশপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি আগামীকালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে বোর্ড।