স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেছেন, এইচপিভি টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের কোনো নেতিবাচক সম্পর্ক নেই। এই ধরনের গুজব এবং প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. মো. আবু জাফর বলেন, মঙ্গলবার একটা কেন্দ্রে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলাকালে টিকা নেয়ার পর হঠাৎ দুজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাদের অসুস্থ হওয়া দেখে পরবর্তীতে আরো কয়েকজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়। বর্তমানে এদের সবাই সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন ছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি হলেও তারা কোনো টিকা নেয়নি। প্রাথমিকভাবে রোগটি ম্যাস সাইকোজেনিক ইলনেস ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া এই ঘটনা তদন্তে কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত যেকোনো টিকা দেয়ার টিকাগ্রহণকারীর শরীরে সাময়িক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তখন শুয়ে বিশ্রাম নিলে খুবই অল্পসময়ের ভেতর ভালো বোধ করে টিকাগ্রহণকারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) এবার সাত বিভাগে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ জনকে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে স্কুলে ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯১৮ জন শিক্ষার্থীকে এ টিকা দেওয়া হবে। ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে, তাদের মধ্যে টিকা নিয়েছে ১৮ লাখ ১৭ হাজার ৩২৬ জন। এছাড়া ৭টি বিভাগে মাত্র ২৭১ জনের শরীরে জ্বর, ব্যথা এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। যেটা সংখ্যার বিচারে খুবই নগণ্য।
তিনি বলেন, এইচপিভি টিকা বেলজিয়ামে উৎপাদিত হয়। সারা পৃথিবীতে ১৪০টি দেশে এই টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে যার মধ্যে ১৪টি মুসলিম দেশ (সৌদি আরব, কাতার, ইউএই, মালয়েশিয়া, মরোক্ক, কুয়েত, মালদ্বীপ উল্লেখযোগ্য) অন্তর্ভুক্ত।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের অন্যতম সফল কার্যক্রম-ইপিআই। এর মাধ্যমে নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঢাকা বিভাগের ১৩ টি জেলা ও ৪টি সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রথম পর্যায়ে টিকাদান ক্যাম্পেইন সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অবশিষ্ট অন্যান্য ৭টি বিভাগ এবং ৮টি সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসরত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী সব কিশোরীদের মধ্যে অত্যন্ত কার্যকর ও নিরাপদ এইচপিভি টিকা প্রদানের লক্ষ্যে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৪ কার্যক্রম গত ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো শিব্বির আহমেদ ওসমানী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. রিজওয়ানুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. এ বি এম আবু হানিফসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।