এইচপিভি টিকায় ধরা লাখ লাখ ভুয়া ছাত্রী - দৈনিকশিক্ষা

লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কাএইচপিভি টিকায় ধরা লাখ লাখ ভুয়া ছাত্রী

মিথিলা মুক্তা, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অসততায় কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপেও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা জেগেছে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স- গ্যাভির সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে গত বছর প্রথম ধাপে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় পরিচালিত এ কর্মসূচিতে ৭৫ শতাংশ লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছিলো। এ বছরও কর্মসূচির মাঝপথেই শতভাগ লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা বিভাগ বাদে সারাদেশের ৫১টি জেলায় টিকা দেয়া। আগামী ২৪ নভেম্বর অবধি এ কর্মসূচি চলবে।  লক্ষমাত্রা অনুযায়ী এবার ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে এই টিকা দেয়ার কথা।  কিন্তু, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কঙ্খিত সংখ্যক ছাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মাদরাসাগুলোর। বিষয়টি নিয়ে এই কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা হতাশাও ব্যক্ত করছেন। 

নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চালু রাখা, উপবৃত্তি ও বিনামূল্যের বই পাওয়া, প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি, অনুমোদন নবায়নসহ অনেক কিছুই নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানে কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকার ওপর। সরকারি এসব সুবিধা টিকিয়ে রাখতে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়াও বাধ্যতামূলক। তাই যুগ যুগ ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি, উপজেলা ও জেলা স্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা ও এক শ্রেণির শিক্ষকের সহায়তায় ভুয়া ছাত্রী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত, পাঠ্যবই তুলে নিয়ে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে আসছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।  এবার ৬২ লাখ কিশোরীকে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়ার মাসব্যাপী কার্ক্রম চালাতে গিয়ে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। 

 

এবার চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল-মাদরাসার পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী ও স্কুলের বাইরে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এই টিকা নিতে পারছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইপিআই কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে। 

কিন্তু দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ কয়েকটি এলাকায় থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে এইচপিভি টিকা দেওয়ার সময়। স্কুল ও মাদরাসায় খাতা-কলমে নাম থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মীরা বাস্তবে ছাত্রী খুঁজে পাচ্ছেন না। নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষকরা ছাত্রীদের হাজিরও করতে পারছেন না। কেউ কেউ স্বীকার করে নিয়েছেন, অনুপস্থিত থাকা ছাত্রীরা বাস্তবে নেই। 

এমনকি বরগুনার বেতাগী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ইত্যাদি স্থানে টিকাদানের সময়ে গণহারে ছাত্রীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, তালিকা অনুযায়ী ছাত্রী হাজির করতে পারবে না এমন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিকল্পিতভাবে গণঅসুস্থতার নাটক সাজাচ্ছে। 

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় টিকা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্য বিভাগের এমটিইপিআই আলমগীর হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘টিকাদান শুরুর আগে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তিনবার করে গিয়েছি। বলেছি, বাস্তবে যে ছাত্রী, সেই তালিকা যেন আমাদের দেওয়া হয়। উপবৃত্তি, বই ও এমপিও চালু রাখতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাতায় অতিরিক্ত ছাত্রী দেখানো হয়েছে।’ 

বরিশালের একজন টিকাদান কর্মকর্তা বলেন, ভুয়া ছাত্রীর সংখ্যায় স্কুলের চেয়ে মাদরাসা এগিয়ে। আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, টিকা দিতে গিয়ে আমরা সেটা পাইনি। 

রাজশাহীর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় স্কুল পর্যায়ে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রীদের এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয় গত ২৪ অক্টোবর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়েই টিকা প্রয়োগ করা হয় ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। 

রাজশাহীর ১ হাজার ৮৬টি প্রাথমিক, ৫৬০টি মাধ্যমিক, ২৪১টি মাদরাসা ও ২২২টি নন-ফরমাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিকা পাওয়ার উপযোগী হিসেবে তাদের ৯৯ হাজার ২৯৭ জন ছাত্রী থাকার কথা জানায়। কিন্তু বাস্তবে এই শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। শেষ দিন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৮১ হাজার ৫০০ জন ছাত্রী। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৮২ শতাংশ ছাত্রী টিকা নিয়েছেন। বাকি ১৮ শতাংশ ছাত্রী আসলেই আছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্কুল-মাদরাসায় টিকা প্রয়োগের সঙ্গে নিয়োজিতরা জানিয়েছেন, মোহনপুর উপজেলার বাটুপাড়া হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে ২৫ জন ছাত্রীর তালিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তুসেখানে টিকা নিয়েছেন মাত্র ১০ জন। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাকি ১৫

ছাত্রীকে ডাকার জন্য শিক্ষকদের চাপ দেন। তখন মাদরাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাস্তবেই মাদরাসায় আর ছাত্রী নেই।

গোদাগাড়ী দারুল উলুম মাদরাসা ২৯৫ জন ছাত্রীর তালিকা দিয়েছিল স্বাস্থ্যকর্মীদের। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে টিকা নিয়েছেন ১৯৩ জন। বাকি ১০২ জন ছাত্রীকে খুঁজে পাননি স্বাস্থ্যকর্মীরা। গোদাগাড়ীর রাজাবাড়িহাট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা দেখানো হয়েছিল ১০০ জন। কিন্তু টিকা নিয়েছেন মাত্র ৪০ জন। দুর্গাপুর উপজেলার গোপীনাথপুর দাখিল মাদরাসায় ছাত্রী দেখানো হয়েছিল ৬৯ জন, টিকা নিয়েছেন ৫৯ জন। আর হোজা অনন্তকান্দি দাখিল মাদরাসায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ জন, টিকা নিয়েছেন ৪৪ জন।

এ বিষয়ে ইপিআই রাজশাহী জেলা কর্মকর্তা কুস্তুরি বেগম বলেন, বারবার বলার পরেও স্কুল কিংবা মাদরাসা থেকে আসল তালিকাটা দেওয়া হয়নি। বেশি সমস্যা মাদরাসায়। অনেক মাদরাসায় যে সংখ্যক ছাত্রী বাস্তবেই নেই, তাদের নাম হাজিরার খাতায় লিখে রেখে সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো আছে। ফলে টিকা দিতে গিয়ে ছাত্রী পাওয়া যায়নি। এ কারণে আমাদের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। 

খাতায় অতিরিক্ত ছাত্রীর তালিকা রাখার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়িহাট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাফরুদ্দিন বলেন, ‘আমি অসুস্থ। এখন কথা বলতে পারব না।’

রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, স্কুল ও মাদরাসাগুলোতে বাস্তবে নেই, এমন ছাত্রীর নামও লিখে রাখা হয়। এবার টিকা দেওয়ার সময়ও সেটা প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এটা থাকা উচিত না। কারণ, ওই তালিকা ধরেই আমরা কাজ করি। আসল তথ্যটাই স্কুল-মাদরাসায় লিপিবদ্ধ থাকা উচিত।’

মাদরাসায় ভুয়া শিক্ষার্থী রাখার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহ আলমগীর ও মাদ্রাসা পরিদর্শক মোহাম্মদ নাছিমুল ইসলামকে ফোন করা হলে 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহ আলমগীর দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিষয়টি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের গোচরে আনা যেতে পারে। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি - dainik shiksha তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি - dainik shiksha স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি ঢাবিতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি নির্দেশিকা প্রকাশ - dainik shiksha ঢাবিতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি নির্দেশিকা প্রকাশ শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজকে ভাসানী নামকরণের দাবি - dainik shiksha শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজকে ভাসানী নামকরণের দাবি এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা কাল - dainik shiksha এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা কাল ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর - dainik shiksha ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039091110229492