দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সারা দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুক্রবার (৩ মে) ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের বি ইউনিটের জিএসটি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় সিট প্ল্যান ছাড়াই গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসানোর অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এদিকে এ ঘটনায় দায়ভার নিচ্ছেন না কেউই। তবে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, উপাচার্যের নির্দেশেই অনভিজ্ঞ এবং জুনিয়র শিক্ষকদেরকে এই দায়িত্ব দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সব সেমিনার লাইব্রেরিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় । এসময় সেখানে একেক টেবিলে ১৮ থেকে ২০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেছেন বলেও দেখা যায়। এছাড়া প্রশাসনিক ভবনের হল রুমেও এবার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্বের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়ও এভাবে সেমিনার লাইব্রেরিগুলোতে আসন বিন্যাস করা হয়েছে।
সেমিনার লাইব্রেরিতে পরীক্ষা দেওয়া এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেমিনার কক্ষে তাদের কোনো সিট প্ল্যান বসানো হয়নি। শিক্ষকরা যাকে যেখানে বসতে বলেছেন তারা সেখানেই বসে পরীক্ষা দেন। একসঙ্গে এক টেবিলে এতজন গাদাগাদি করে পরীক্ষা দেওয়াতে মনোযোগেও সমস্যা হচ্ছিলো বারবার। আরও বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আসলেও এভাবে ঠাসাঠাসি ভাবে বসে পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা এখানেই প্রথম।
এনিয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ৫ম তলার হল পরিদর্শক ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ককে প্রশ্ন করতে বলেন।
‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, আমি ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক। কিন্তু সিট প্ল্যানের জন্য ‘কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটি’ নামে আলাদা একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিই আসন বিন্যাসের ব্যপারে ভালো বলতে পারবে।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. প্রদীপ দেবনাথ বলেন, আমার অনুষদের প্রতিটি বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতেই পরীক্ষা হয়েছে।
এভাবে এক টেবিলে ১৮-২০ জন পরীক্ষা দিলে সেটার স্বচ্ছতা কতটুকু থাকবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটিই বলতে পারবে।
কেন্দ্র ব্যবস্থা কমিটির সদস্য সচিব আবু ওবায়দা রাহিদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমন অদ্ভুত আসন বিন্যাসের দায়ভার তিনি নেবেন কিনা, সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজে কোনো দায় না নিয়ে কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, এবার আমরা চেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে। সেজন্যই সেমিনার লাইব্রেরি গুলোতেও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই অল্প সংখ্যক পরীক্ষার্থীর জন্য আরেকটা কেন্দ্র ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল। এক টেবিলে ১৮ থেকে ২০ জন একসঙ্গে পরীক্ষা দিলে সেখানে স্বচ্ছতা থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের শিক্ষকরা দায়িত্বে ছিলেন। তারা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছেন। এখন যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে পরবর্তীতে এভাবে সেমিনার লাইব্রেরিগুলোতে আমরা আর পরীক্ষা নেব না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহা. হুমায়ুন কবির বলেন, আসন বিন্যাস কমিটির আরেকটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল। ভবিষ্যতে আমরা এটাকে বিবেচনায় নিয়ে এরকম গাদাগাদি যেন আর না হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।