দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারককে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় খুলনার বিশেষ কৌঁসুলি (পিপি) জহিরুল ইসলামকে এক মাস আইন পেশা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল ও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে করা আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১০ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে ।
মঙ্গলবার (৭ মে) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে পিপির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খোন্দকার রেজা-ই রাকিব।
আইনজীবী সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছি। আদালতে ওই আবেদনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি। তবে আদালত এক মাস আইন পেশা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দিয়েছেন। আর ১০ জুন পিপিকে আবারও হাজির হতে হবে।’
এর আগে, এজলাসে বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারককে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগে খুলনার বিশেষ পিপি জহিরুল ইসলাম পলাশকে গত ৩ এপ্রিল তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলও জারি করা হয়। এর আগে গত ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতির কাছে ওই পিপির বিষয়ে অভিযোগ করে চিঠি দেন খুলনার বিচারক তরিকুল ইসলাম। পরে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের এই বেঞ্চে পাঠান।
প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে বিচারক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘২৫ মার্চ একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত কক্ষে আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশের সঙ্গে কিছুটা বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ কারণে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি তাঁর মামলা না শুনে চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই। তখন জহিরুল ইসলাম বলে ওঠেন, আপনি আমাকে না শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন? আমি বললাম, এটা কোর্টের প্রসিডিউর, যেহেতু আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে আমার কিছুটা বাগ্বিতণ্ডা হলো। তখন প্রত্যুত্তরে উচ্চস্বরে পলাশ বলেন, আপনার চেয়ে আমি এই বারে আগে আসছি। আমি প্রসিডিউর ভালো বুঝি। আপনি অনিয়ম করেন। আমরা খুলনা বারে ২ হাজার জন আর আপনারা মাত্র ৫০ জন। আমি আপনাকে চিনি। আপনার বাড়ি চিতলমারী। আমার বাড়িও চিতলমারী। আপনার বিরুদ্ধ আমি চিফ জাস্টিসের কাছে যাব। আপনি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকেন।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বাদীপক্ষের আইনজীবীর এমন আচরণে বিব্রতবোধ করায় মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করি। আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশ সেদিনই একটি ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন এবং আদালতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্যতা ও কোর্ট প্রসিডিউরকে পাশ কাটিয়ে বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। ওই ভিডিওতে বিচারক হিসেবে আমাকে দুর্নীতিবাজসহ আরও অনেক বিষয়ে মিথ্যা, বানোয়াট এবং সম্মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে ২৭ মার্চ তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে ২৮ মার্চ তিনি জবাব দেন। জবাবে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আইনজীবী পলাশ ক্ষমা প্রার্থনা করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।