চট্টগ্রাম নগরের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের (বাওয়া) মাধ্যমিক পর্যায়ের এক ছাত্রী চলতি মাসের শুরুতে জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। অবস্থার অবনতি হলে ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই ছাত্রীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর পর থেকেই সচেতন ছিলেন তাঁরা। বাসায় সব সময় মশারি টাঙানো থাকত। মশা ঠেকাতে ব্যবহার করা হতো কয়েল, মশা মারার স্প্রে, ক্রিম। তাই বাসাতে মশা কামড়ানোর সুযোগ কম। অন্যদিকে বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি রয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশের নালা অপরিষ্কার। ফটকের সামনের সড়কে জমে থাকে পানি। তাই বিদ্যালয় থেকে এডিস মশা কামড়ে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
একজন কিংবা দুজন নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১০৭ শিক্ষার্থী গত এক মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রাতঃশাখার শিক্ষার্থী ৬৮ জন ও দিবাশাখার শিক্ষার্থী ৩৯ জন। প্রাতঃশাখার নবম শ্রেণির সবচেয়ে বেশি ছাত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, ১৪ জন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব হিসাবেই এ তথ্য এসেছে।
নগরের দামপাড়া এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে দুই পালা মিলিয়ে শিক্ষার্থী আছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার। শিক্ষক আছেন ১৪২ জন।
জানতে চাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফ উল হাছান চৌধুরী বলেন, প্রাতঃশাখার ৬৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছে। বাকিরা চিকিৎসাধীন। পাশাপাশি ছয়জন শিক্ষক ও একজন আয়াও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যে চারজন সুস্থ হয়েছেন। দুজন চিকিৎসাধীন। এক মাসের মধ্যে তাঁরা সবাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
অন্যদিকে দিবাশাখার ৩৯ শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান সহকারী প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, এ শিক্ষার্থীরা কেউ বর্তমানে বিদ্যালয়ে আসছে না।
অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন
বিদ্যালয়ের এত শিক্ষার্থীর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠায় অভিভাবকেরা। আজ সোমবার দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কথা হয় শিক্ষার্থী ও বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে।
এক ছাত্রী ডেঙ্গু হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। ওই শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ের পাশে একটি নালা রয়েছে। নালাটি ঠিকঠাক পরিষ্কার করা হয় না। শৌচাগারও অপরিষ্কার।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, এমন এক ছাত্রীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ে বিদ্যালয় ও বাসার বাইরে আর কোথাও যায়নি। বাসায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করেছে। মেয়ে তাঁকে জানিয়েছে, স্কুলে তাকে মশা কামড় দিয়েছে।
আরও কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করলেন, বিদ্যালয় থেকে এডিস মশা কামড়ে থাকতে পারে। কারণ, দিনের একটা বড় অংশ বাচ্চারা বিদ্যালয়ে কাটাচ্ছে।
বিদ্যালয়ে মশকনিধনের নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয়েছে বলে দাবি করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফ উল হাছান চৌধুরী। তিনি বলেন, মশা যেকোনো জায়গা থেকে কামড়ে থাকতে পারে। বিদ্যালয়ে দুদিন আগেও মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। শিক্ষকেরাও শ্রেণিকক্ষে ডেঙ্গু সম্পর্কে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, মূল ফটকের সামনেই জমে আছে পানি। বিদ্যালয়ের মাঠের এক পাশেও ময়লা ছিল। একাডেমিক ভবনের পেছনেও ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। বিদ্যালয়টি সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে পড়েছে। ওয়ার্ডের কাউন্সিল মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের দাবি, তাঁরা ওই বিদ্যালয়ে মশার ওষুধ ছিটিয়েছেন।
এক বিদ্যালয়ের এতজন শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেন, দ্রুত ওই বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা উচিত। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের আশপাশের নালা, ঝোপঝাড়সহ পুরো এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো উচিত।