একজনের অনিয়মে বন্ধ ২৪ জনের এমপিও - দৈনিকশিক্ষা

একজনের অনিয়মে বন্ধ ২৪ জনের এমপিও

মুরাদ মজুমদার |

এমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের জুলাই মাসের বেতন তোলার শেষ দিন ছিলো গত ১০ আগস্ট। কিন্তু গতকাল শনিবার (২৬ আগস্ট) পর্যন্ত রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনী আহমাদিয়া ফাজিল মাদরাসার ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী জুলাই মাসের বেতনভাতার সরকারি অংশ বা এমপিওর টাকা তুলতে পারেননি। শিক্ষকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের ২৫ জন প্রভাষক-কর্মচারীর মধ্যে একজন শিক্ষকের এমপিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান পদে থাকা ওই প্রভাষকের বেতন বন্ধ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি পদে থাকা আরেক শিক্ষক কোনো শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বিল ছাড় করছেন না।

ওই মাদরাসায় কর্মরত কয়েকজন প্রভাষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে থাকা আরবি প্রভাষক আবু ছালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়া তথ্য গোপন ও ভুয়া কাগজ তৈরি করে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এজন্য জুলাই মাস থেকে তার এমপিও স্থগিত করে তার নেয়া অতিরিক্ত টাকা সরকারি কোষাগারে পাঠাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে শোকজ করেছে অধিদপ্তর। কিন্তু ওই শিক্ষকের বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাদরাসার সভাপতি পদে থাকা আরেক শিক্ষক ফরিদুজ্জামান রিপন অন্য কোনো শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ছাড় করছেন না। সভাপতি বেতন বিলে স্বাক্ষর না করায় কোনো শিক্ষক-কর্মচারী গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জুলাই মাসের এমপিও বা বেতনভাতার সরকারি অংশ ব্যাংক থেকে তুলতে পারেননি। 

মাদরাসার একজন প্রভাষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কেউ যদি কোনো দোষ করেও থাকে তার জন্য সে শাস্তি পাবে, তার সহকর্মীদের কেনো পরিবার নিয়ে এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হবে? 
অপর একজন প্রভাষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ থাকতেও তাকে চাপ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভার নেয়ার অসম্মতি আদায় করে তিনজন প্রভাষকের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অধ্যক্ষের ভার দেয়া হয়েছে জাকারিয়া সাহেবকে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজের আস্থাভাজন ও অনুগতদের দিয়ে পকেট কমিটি করে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। ফরিদুজ্জামান রিপন নামের যে শিক্ষক সভাপতির দায়িত্বে আছেন, তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবু ছালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়ার আস্থাভাজন। তাই ভারপ্রাপ্ত প্রধান যা বলেন, সভাপতিও তাই করেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু ছালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়া দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর আমাকে শোকজ করেই আমার এমপিও বন্ধ করেছে, এটা কি বিধি সম্মত? আমি শোকজ নোটিশ পেয়েছি ৬ আগস্ট। পরে জবাব দিয়েছি। আর এমপিওর চেক ছাড় হওয়ার পর আমি কি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে বিলে স্বাক্ষর করবো না অন্য কেউ করবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি সভাপতি। তিনি অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। তাই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের বিল করা হয়নি। 

ওই মাদরাসার সভাপতি ও  একই উপজেলার বেতগারা হাইস্কুলের ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদুজ্জামান রিপন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবু ছালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদন করেছেন। এমপিও শিটে পদবী না থাকায় কয়েকজন প্রভাষকের আবেদন রিজেক্ট করে দেয়া হয়েছিলো বলে জেনেছি। তাই তাদের কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভার নেয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তারাই অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের বেতন বন্ধ করিয়েছেন। একজন প্রভাষক রাজনৈতিক পরিচয় দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধাও দাবি করছেন। আমি গত ৩ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি। ভারপ্রাপ্ত প্রধানের বেতন বন্ধ করে তাকে করা শোকজের অনুলিপি আমাকেও পাঠিয়েছে অধিদপ্তর। এখন তিনি শোকজের জবাব দিয়েছেন বলেও জেনেছি। যেহেতু বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন তাই আমি বেতন বন্ধ হওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধানের স্বাক্ষরে বিল করবো না-কি অন্য কাউকে প্রতিষ্ঠানের ভার দিয়ে তার মাধ্যমে বিল করবো সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিঠাপুকুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ও সভাপতির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে অন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ছাড় করার অনুরোধ জানাবো। 

মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ শাখার উপপরিচালক ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক এবং সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি কমিটির সদস্য সচিব মো. আবুল বাসার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, যদি ভারপ্রাপ্ত প্রধানের বেতন বন্ধ হয় সেক্ষেত্রে বিধিমোতাবেক যিনি প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হওয়ার যোগ্য তাকে দায়িত্ব দিয়ে তার মাধ্যমে বেতন বিল ছাড় করা যেতে পারতো। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।

আবুল বাসার আরো বলেন, এই প্রভাষক প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ ও তিনজন জ্যেষ্ঠ প্রভাষককে টপকে প্রতিষ্ঠানের ভার নিয়েছেন। যার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। কারো বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পেলে এমপিও স্থগিত করেই সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী তার এমপিও স্থগিত করা হয়েছে। বিধিমোতাবেকই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

 

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072128772735596