এবারও দুই শতাধিক কলেজ ও মাদ্রাসাকে শিক্ষার্থীরা পছন্দের তালিকায় রাখেনি। নূন্যতম একজন শিক্ষার্থীও ওইসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ‘চয়েস’ দেয়নি। এছাড়া এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে আবেদনই করেনি। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর চলতি বছর কলেজে একাদশ শ্রেণী এবং মাদ্রাসার দাখিলে ভর্তির আবেদন করেছিল ১৩ লাখ ছয় হাজার ৯৫৮ জন শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাবিক উদ্দিন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, আর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি ও সমমানের দাখিল পরীক্ষায় মোট ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪১০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পরবর্তীতে ফল পুননিরীক্ষণে আরও আড়াই হাজার শিক্ষার্থী নতুন করে উত্তীর্ণ হয়েছে।
সেই হিসেবে সারাদেশে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণদের মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘যারা প্রথম ধাপে আবেদন করেনি তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপেও আবেদন করতে পারবে। একবারে ফ্রেশ আবেদন করা যাবে।’
সারাদেশে কতটি কলেজ ও সমমানের আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই সংখ্যাটি এখন বলা যাচ্ছে না; তবে দুইশর’ মতো কলেজে কেউ চয়েস দেয়নি।’
২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি নেয়া হয়। ওই সময় সারাদেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজে ও আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়।
এর মধ্যে ২০৪টি প্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করলেও তাদের কেউই ভর্তির নিশ্চায়ন করেনি। ফলে ওইসব কলেজ কোন শিক্ষার্থী পায়নি। এছাড়া পাঁচ শতাধিক কলেজ শিক্ষার্থী পেয়েছে নামে মাত্র। ওইসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছে।
এবার আবেদনকারীদের মধ্যে যারা প্রথম ধাপে কলেজ পায়নি তাদের দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই জানিয়ে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘তারা যেসব কলেজ পছন্দের তালিকা দিয়েছে সেখানে তাদের চেয়ে বেশি ভালো ফল করা শিক্ষার্থী আবেদন করায় তারা হয়তো কলেজ পায়নি। দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপে তাদের কলেজের পছন্দক্রম পাল্টে যেখানে (কলেজ) ফাঁকা আছে, সেটা পছন্দ দিতে হবে। তাদের কোন না কোন কলেজ দেয়া হবে।’
প্রথম ধাপে কলেজ পেয়েছে মোট ১২ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রী ছয় লাখ ৭৬ হাজার ১৫০ জন ও ছাত্র পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪৭ জন।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার বলেন, ‘এসএসসি ও সমমানের ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। ওরা অনলাইনে সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। ফলাফলের ভিত্তিতে যারা এগিয়ে তারাই পছন্দের কলেজ পেয়ে গেছে।’
প্রথম ধাপে আবেদন করেও কোন কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচন হয়নি ৪৫ হাজার ১৮৩ জন শিক্ষার্থী। ৫ সেপ্টেম্বর রাতে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। প্রথম ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ‘নির্বাচন নিশ্চায়ন’ করতে হবে। একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন আগামী ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর নেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। একই দিনে প্রথম ‘মাইগ্রেশন’ ফল প্রকাশ করা হবে। এর পর ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ‘নির্বাচন নিশ্চায়নের’ সুযোগ পাবে।
তৃতীয় ধাপের আবেদন নেয়া হবে ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর। ২৩ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। এর পর ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ধাপের ‘নির্বাচন নিশ্চায়ন’ চলবে।
পরবর্তীতে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি চলবে। শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হবে ৮ অক্টোবর।
একাদশে ভর্তির কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে (http://xiclassadmission.gov.bd/) প্রবেশ করে ফল দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের রোল নম্বর, বোর্ডের নাম, পাসের বছর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইনপুট দিয়ে ফল দেখতে পারবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটি ভেরিফিকেশন কোডও এন্ট্রি দিতে হবে; এটি নির্ধারিত ওয়েবপেজেই প্রদর্শন হচ্ছে।