একুশে চুয়েট - দৈনিকশিক্ষা

একুশে চুয়েট

চুয়েট প্রতিনিধি |

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ২০ বছর পেরিয়ে একুশতম বর্ষে পদার্পণ করেছে। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে চুয়েট। মাত্র দুই দশকের পথচলায় চুয়েট দেশের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালিকায় স্থান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত কিউএস র‌্যাংকিংয়ে পরপর দুইবার চুয়েট পেয়েছে ঈর্ষণীয় সফলতা। 

সর্বশেষ প্রকাশিত কিউএস র‌্যাংকিংয়ে এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৪০১-৪৫০ এর মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৯২তম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান অর্জন করেছে। এছাড়া সারাদেশের মধ্যে শীর্ষ ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫ম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তৃতীয় সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে র‌্যাংকিংয়ে স্থান পেয়েছে চুয়েট।

চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পাহাড়তলি ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের পাশে উনসত্তরপাড়া মৌজায় অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের উত্তর-পূর্বে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে প্রায় ২০ কিলোমটার দূরে এক মনোরম প্রাকৃতিক পাহাড়ি ভূমিতে প্রায় ১৭১ একর জায়গাজুড়ে চুয়েট ক্যাম্পাসের অবস্থান। 
মনোরম এই ক্যাম্পাসে একইসাথে পাহাড়, সমতলভূমি ও লেকের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৫ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যেই দেশের একমাত্র খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী বহমান। আর ঘন্টাখানেকের দূরত্বে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মনুষ্যসৃষ্ট স্বাদু পানির কাপ্তাই হ্রদ। কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলীর তীরবর্তী সমভূমি অঞ্চল হওয়ার সুবাদে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পুরোটাই আঁচড়ে পড়েছে এই ক্যাম্পাসে। 

ছোট্ট পরিসরেই এখানে মিলবে সবুজ প্রকৃতি, সারি-সারি গাছের সমারোহ, বাহারি ফুলের সমাহার, পাখিদের কিচির-মিচির কলতান, পাহাড়-সমতল মিশ্রিত প্রাকৃতিক লেইক, পাহাড়ি উঁচু-নিচু মেঠো পথ, বণ্য প্রাণীর অবাধ বিচরণ, প্রকৌশলবিদ্যার অনুকরণে দৃষ্টিনন্দন সব অবকাঠামো ও স্থাপনা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, স্বাধীনতা ভাস্কর্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, মুক্ত মঞ্চ, পাহাড়ি মেঠোপথে ঝুলন্ত সেতু ও ছোট-ছোট লেইকের সম্মিলন চুয়েট ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যকে অনন্য মুগ্ধতা দিয়েছে। এ যেন ১৭১ একরজুড়ে পুরো ব-দ্বীপের বাংলাদেশেরই চিত্রায়ন।

মূলশহর থেকে বেশ দূরে গ্রামীণ জনপদে অবস্থান ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতার সত্ত্বেও সীমিত বাজেটের মধ্যে চুয়েট উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় নানা সাফল্য অর্জন করে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রতিবছর নিয়মিতভাবে একাধিক আর্ন্তজাতিক কনফারেন্স-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন, বিশ্বমানের ল্যাব ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, রোবট গবেষণায় যুগান্তকারী উদ্ভাবন, কর্ণফুলী ও হালদা নদী সম্পর্কিত গবেষণা, বহুবিধ শিল্পসমস্যার সমাধান ও কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভূমিকম্প, পরিবহন-যানজট, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ সমস্যা বিষয়ক জনগুরুত্বপূর্ণ গবেষণা, শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় ও যৌথ গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ, বিভিন্ন খ্যাতনামা জার্নালে নিয়মিত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ, বহিঃর্বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে উচ্চশিক্ষা-গবেষণায় সমঝোতা চুক্তি গড়ে তোলা এবং সরকারের রূপকল্প অনুসরণে স্মার্ট বাংলাদেশ ও ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের নিত্যনতুন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ চুয়েটের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাতীয় উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পেশাদার প্রকৌশলীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণাকে জনকল্যাণে বিস্তৃত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে চুয়েট। 

বিশ্ববাজারের চাহিদার সাথে সমন্বয় ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত মানব সম্পদ তৈরিতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চুয়েট কাজ করে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে মাত্র ৩টি বিভাগ এবং ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে পরবর্তীতে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি) চট্টগ্রাম হিসেবে উন্নীত হয়। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি নবরূপে আত্মপ্রকাশ করে। 

বর্তমানে ১৮টি বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে ৪ হাজার ৫০০ জন এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আরো ১ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থীসহ সবমিলিয়ে মোট ৬ হাজার ছাত্র-ছাত্রী চুয়েটে অধ্যায়নরত রয়েছেন। একইসাথে ১০১জন পিএইচডি ডিগ্রীধারীসহ ৩৩৩ জন শিক্ষক, ১৭১ জন কর্মকর্তা এবং ৪৫৯ জন কর্মচারী মিলে প্রায় ১ হাজার জনের পরিবার হিসেবে চুয়েটকে এগিয়ে নেয়ার ব্রতে নিযুক্ত রয়েছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল বৃহস্পতিবার, জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল বৃহস্পতিবার, জানবেন যেভাবে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি - dainik shiksha অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! গণভবন, ভিকারুননিসার বোন ও আইডিয়ালের কলোনি কোটা বাতিল - dainik shiksha গণভবন, ভিকারুননিসার বোন ও আইডিয়ালের কলোনি কোটা বাতিল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ - dainik shiksha ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ সমন্বয়কদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, সাবধান: সারজিস - dainik shiksha সমন্বয়কদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, সাবধান: সারজিস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003187894821167