ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার হিসেবে সিরাজগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নের মাদরাসা ও এতিমখানার (লিল্লাহ বোর্ডিং) শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য বরাদ্দ করা (জিআর) চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার রতনকান্দি, বাগবাটি ও ছোনগাছা ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ হওয়া ৬০ টন চাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না দিয়ে নামমাত্র টাকা দেওয়া হয়েছে। বাদবাকি টাকা রতনকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইদুল ইসলাম জুরান, ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং বাগবাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
উপজেলা পরিষদ প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এতিমদের খাবারের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে (জিআর) চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রতনকান্দি ইউনিয়নে ২৫ প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ৩১ টন, বাগবাটিতে ১০ প্রতিষ্ঠানে ১৪ টন এবং ছোনগাছা ইউনিয়নের ১০টি প্রতিষ্ঠানে ১৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত ২৮ মে সদর উপজেলা পরিষদ প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ৬০ টন চালের সরবরাহ আদেশ (ডিও) নেন রতনকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইদুল ইসলাম জুরান। চাল উত্তোলনের পর তিনি সিরাজগঞ্জ শহরের বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী আফসার আলীর কাছে ওই চাল বিক্রি করে দেন।
সরকারি এক টন চালের বাজারমূল্য ৪৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রকল্প সভাপতির মাধ্যমে প্রতি টন চালের বিপরীতে ২৫ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়েছে বলে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জানিয়েছেন। মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা এই চালের বাকি টাকা সাইদুল ইসলাম জুরানের নেতৃত্বে বাগবাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এবং ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে বাগবাটি পশ্চিম ফুলকোচা কবরস্থান দারুল হুদা ইসলামি কওমি মাদরাসার সুপার মৌলানা মো. আসাদুল্লাহ বলেন, ‘আমাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে। কত টাকা বরাদ্দ এসেছে তা আমার জানা নেই।’
সাহানগাছা তালিমুস সুন্নাহ মাদরাসার ও এতিমখানার সুপার মুফতি আল-আমিন সিরাজী বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে এক টন চাল বরাদ্দ হয়েছিল। দত্তবাড়ী মাদ্রাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের টাকা দেওয়া হয়। আমি এক টনের বিপরীতে ২৫ হাজার টাকা পেয়েছি। যাদের এক টন তারা সবাই ২৫ হাজার এবং যাদের দুই টন তারা ৫০ হাজার করে টাকা পেয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগবাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতি এক টন চালের অনুকূলে প্রতি মাদরাসায় ২৫ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি টাকা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বস্থানীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হবে।’
আর রতনকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইদুল ইসলাম জুরান বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে। বেঁচে যাওয়া টাকা ওইসব প্রতিষ্ঠানে দেওয়ার জন্য আলোচনা চলছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাত্র পাঁচ দিন আগে এখানে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারব।’