বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশে বিভিন্ন বেসরকারি কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৯২ জন শিক্ষকের এমপিওভুক্তিতে অহেতুক দেরি করাকে শিক্ষা প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতার হিসেবে অভিহিত করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। সমস্যা সমাধানে শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে তারা মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছেন। এরই অংশ হিসেবে রোববার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবেন তারা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করছে।
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ পেয়ে ইতোমধ্যে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ৭১ জন এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩৪ জন তৃতীয় শিক্ষককে এমপিও দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯২ জন বাদ পড়ে যায়। এই বিষয়ে বারবার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ কোনও সাড়া মেলেনি।
নঁওগার গাঙ্গুরিয়া ডিগ্রি কলেজের একজন প্রভাষক জানান, একাধিকবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, অতিরিক্ত সচিব আ ন ম আল ফিরোজ, উপ সচিব জনাব মো মিজানুর রহমানের সাঙ্গে অনেক বার দেখা করেও কোন ফল আসেনি। তাই বাধ্য মানববন্ধন কর্মসুচি ঘোষণা করেছি।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর একজন প্রভাষক বলেন, কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই আমাদের এমপিও দিতে চাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, এদিকে কতিপয় দালাল চেষ্টা করছেন ভুক্তভোগীদের আদালতে নিয়ে যেতে। এতে বিষয়টি আরো ঝুলে যেতে পারে। অতীতে দেখা গেছে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে রিট করার পর আদালত একটা রুল জারি করে। আইনজীবীরা বোঝান যে আদালতের রায় হয়ে গেছে। বাস্তবে রুল ও রায়ের মধ্যকার ফারাক বোঝার মতো মানুষের সংখ্যা কম। অপরদিকে ওই রুলের জবাব দিতে প্রচুর সময় ব্যয় করে শিক্ষা প্রশাসন। আর এই ফাঁকে শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে গেলেই তারা বলেন বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন তাই কোনো কথা বলা যাবে না। আপনারা তো আদালতে গেছেন।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক আরো বলেন, বঞ্চিত মানুষের সর্বশেষ আশ্রয় বা নালিশ করা জায়গা সংবাদ মাধ্যম। রিটের প্যাঁচে পড়ে গেলে সাংবাদিকরাও আর ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আমলাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য নিতে পারেন না। কারণ, আমলারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি বিচারাধীন তাই মন্তব্য বা কোনো তথ্য দেয়া যাবে না।’
জানা যায়, বেসরকারি কলেজে ডিগ্রি পাস কোর্স খোলার শর্ত হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নীতিমালায় বলেছে স্নাতক (পাস) কোর্স চালুর জন্য বিষয়ভিত্তিক তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। অন্যান্য শর্তের পাশাপাশি নিয়ম মেনে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিলেই ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালুর অনুমতি দেয় ও নবায়নের ক্ষেত্রেও নিয়ম কঠোরভাবে মানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত এমপিও নীতিমালায় বেসরকারি কলেজের জন্য বিষয়ভিত্তিক দুইজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারেন। বহু বছর ধরে এই দ্বৈত প্রশাসন চলে আসছে। ফলে ভোগান্তী পোহাতে হয় শিক্ষকদের।