এমপক্স কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণ কী, ঝুঁকিতে কারা? - দৈনিকশিক্ষা

এমপক্স কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণ কী, ঝুঁকিতে কারা?

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থেকে আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও।

আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এমপক্স কী এবং এর লক্ষণগুলো কী?
গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় ভাইরাস হলেও এমপক্স সাধারণত অনেক কম ক্ষতিকারক।

প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়। 

এই রোগে আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা।

আক্রান্ত ব্যক্তির একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।

অত্যন্ত চুলকানো বা ব্যথাদায়ক এই ফুসকুড়িগুলো পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্ক্যাব বা গোল গোল পুরু আস্তরে পরিণত হয়ে শেষে পড়ে যায়। এর ফলে দাগ সৃষ্টি হতে পারে।

সংক্রমণের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে।

তবে ছোট শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মারাত্মক।

এর আক্রমণের কারণে গুরুতর ক্ষেত্রে মুখ, চোখ এবং যৌনাঙ্গসহ পুরো শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে।

কোন কোন দেশে এমপক্স ছড়িয়ে পড়েছে?
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট সমৃদ্ধ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এমপক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

এই অঞ্চলগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয় আর শত শত মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা।

বর্তমানে অনেকগুলো দেশে বিভিন্ন প্রাদুর্ভাব একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে- বিশেষ করে কঙ্গো এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে।

রোগটি সম্প্রতি বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, উগান্ডা এবং কেনিয়াতে দেখা গেছে যা সাধারণত সেখানে দেখা যায় না।

মোটাদাগে এমপক্সের দুটি ধরন রয়েছে - ক্লেড ১, যা সাধারণত আরও গুরুতর হয় এবং ক্লেড ২।

ক্লেড ১ ভাইরাস – কয়েক দশক ধরে কঙ্গোতে বিক্ষিপ্ত প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল এবং এখন ছড়িয়ে পড়া ধরনটিও এটি।

ক্লেড ১’র কিছু ধরনে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

গত বছরে সংক্রামিত অনেকের তুলনামূলকভাবে নতুন ও আরও গুরুতর ধরনের এমপক্স ক্লেড ১বি হওয়ায় এনিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লেড ১বি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা বাকি। তবে ধারণা করা হচ্ছে এটি সম্ভবত আগের ধরনের চেয়ে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, একইসঙ্গে আরও গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে।

আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের শুরু থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ এমপক্সে আক্রান্ত হয়েছে আর এতে ৪৫০’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এই সংখ্যা ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের একই সময়ের তুলনায় সংক্রমণের ক্ষেত্রে ১৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ বেশি।

এর আগে ২০২২ সালে এমপক্সের মৃদু ধরন ক্লেড ২’র কারণে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।

এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো যে দেশগুলোতে সাধারণত এই ভাইরাস দেখা যায় না এমন প্রায় ১০০টি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলিকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

এমপক্স কীভাবে ছড়ায়?
এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে।

ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

ভাইরাসে দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে।

বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনো প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।

কঙ্গোর বর্তমান প্রাদুর্ভাবের বড় একটি কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

ছোট শিশুসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে এমপক্স পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা?
রোগের উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যকর্মী এবং পরিবারের সদস্যসহ তার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা যে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সে সম্পর্কে আরও বুঝতে বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন।

এদের মধ্যে অল্পবয়সী শিশুরা থাকতে পারে। কারণ একদিকে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, অন্যদিকে অঞ্চলটির অনেকরই পুষ্টির অভাব রয়েছে। ফলে রোগের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই করা বেশি কঠিন হয়ে যায়।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ছোট শিশুরা যেভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে খেলাধুলা করে এবং একে অপরের সঙ্গে মেশে তার কারণে ঝুঁকিতে থাকতে পারে।

এমনকি চার দশকেরও বেশি সময় আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া গুটিবসন্তের টিকাও তারা পাচ্ছে না। ফলে আগের টিকা পাবার কারণে বয়স্ক ব্যক্তিরা হয়তো কিছুটা সুরক্ষিত।

দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার যে কারোই, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হবার আরও বেশি ঝুঁকি রয়েছে।

এর থেকে বাঁচতে এমপক্সে আক্রান্ত কারও সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে এবং ভাইরাসটি যদি আপনার আশেপাশের কারও থাকে, তবে সাবান ও পানি দিয়ে আপনার হাত পরিষ্কার করতে হবে।

সব ক্ষত সেরে না যাওয়া পর্যন্ত এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা উচিৎ।

ডব্লিএইচও বলছে, সুস্থ হওয়ার পর ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত যৌন সম্পর্কের সময় সতর্কতা হিসেবে কনডম ব্যবহার করা উচিৎ।

এমপএক্সের কোনো টিকা আছে?
এমপএক্সের টিকা আছে, তবে যারা ঝুঁকিতে আছে বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকছে কেবল তারাই এটি পেতে পারে।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, যাদের প্রয়োজন তাদের সবার কাছে টিকা পৌঁছাবার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নেই।

এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত না হলেও জরুরি ব্যবহারের জন্য এমপক্সের টিকাগুলো দেয়ার জন্য সম্প্রতি ওষুধ প্রস্তুতকারকদের নির্দেশ দিয়েছে ডব্লিউএইচও।

আর এখন যেহেতু আফ্রিকার সিডিসি মহাদেশব্যাপী ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করেছে, আশা করা যায় এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারগুলো আরও ভালভাবে সমন্বয় করতে সক্ষম হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চিকিৎসা সরবরাহ এবং সহায়তার প্রবাহকে সম্ভাব্য পরিমাণে বাড়াবে।

বৈশ্বিক কোনো পদক্ষেপ ছাড়া বর্তমান প্রাদুর্ভাব মহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ব্যর্থতা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত না করা: হাসনাত - dainik shiksha অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ব্যর্থতা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত না করা: হাসনাত সাত কলেজের বিষয় পছন্দক্রমের ফল ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে - dainik shiksha সাত কলেজের বিষয় পছন্দক্রমের ফল ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজের নামফলক পরিবর্তন করলেন আন্দোলনকারীরা - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজের নামফলক পরিবর্তন করলেন আন্দোলনকারীরা চবিতে চার সমন্বয়কের পদত্যাগ - dainik shiksha চবিতে চার সমন্বয়কের পদত্যাগ রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা আপাতত নেই: সমন্বয়ক মাহফুজ - dainik shiksha রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা আপাতত নেই: সমন্বয়ক মাহফুজ অষ্টম-নবমে বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের তথ্য সংশোধনের সুযোগ - dainik shiksha অষ্টম-নবমে বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের তথ্য সংশোধনের সুযোগ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মময় জীবন - dainik shiksha ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মময় জীবন গ্লোবাল সাউথ সামিটে যোগ দিলেন ড. ইউনূস - dainik shiksha গ্লোবাল সাউথ সামিটে যোগ দিলেন ড. ইউনূস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003633975982666