এমপি আনার হ*ত্যা: নেপালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে সিয়াম - দৈনিকশিক্ষা

এমপি আনার হ*ত্যা: নেপালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে সিয়াম

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের পলাতক আসামি সিয়াম নেপালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।

তাকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে নোটিশ জারি করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেপালে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। সেখানে তাকে যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহের দায়িত্ব ছিল গ্রেফতারকৃত তানভীর ভূঁইয়া এবং নেপালে পলাতক আসামি সিয়ামের। এজন্য দুজনকে দুই ধরনের কাজ দেয় খুনের মূল সমন্বয়ক শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ। গ্রেফতারকৃত অপর আসামি সেলিস্তি রহমানের ভূমিকা এখনো রহস্যজনক। কারণ সেলিস্তি হলো হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী।

৩০ এপ্রিল সে শাহীন এবং আমানুল্লাহর সঙ্গে কলকাতায় যায়। কিলিং মিশনের সব ব্যবস্থা করার পর ১০ মে শাহীন ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু আমানুল্লাহর সঙ্গে সঞ্জীবা ভবনে থেকে যায় সেলিস্তি। শাহীনের সঙ্গে ঢাকা না ফিরে সে কেন কলকাতায় থেকে গেল সে বিষয়ে সেলিস্তি ডিবিকে যে বক্তব্য দিচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না ডিবির কাছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, তানভীরের দায়িত্ব ছিল হত্যাকাণ্ডের পর দেশের বিভিন্ন লোককে ফোন করা। এক্ষেত্রে এমপি আনারের সঙ্গে যাদের বিরোধ ছিল তাদেরই প্রাধান্য দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ঘটনার পর তানভীর ভারত থেকে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চল এবং ব্যবসায়ী জামানসহ বেশ কয়েকজনকে ফোন করেন।

তবে যাদের ফোন করা হয়, কাকতালীয়ভাবে তাদের কেউই ফোন ধরতে পারেননি। সকালের দিকে ফোন করার কারণে তারা কলগুলো ধরতে পারেননি বলে ডিবি কর্মকর্তাদের ধারণা। ডিবি জানিয়েছে, যাদের ফোন করা হয়েছে, তারা ফোন ধরলে সংক্ষেপে সাংকেতিক ভাষায় দু-একটি কথা বলেই ফোন রেখে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র জানায়, ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের ক্ষেত্রে সিয়ামের ওপর দায়িত্ব ছিল- হত্যাকাণ্ডের পর এমপির মোবাইল ফোনগুলো ঘটনাস্থল কলকাতা থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া। সে অনুযায়ী ১৩ মে সিয়াম ঘটনার পর এমপির মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে কখনো বিহার, কখনো দিল্লি, কখনো বেনাপোলসহ বিভিন স্থানে যান। ওই সব স্থান থেকে এমপির ঘনিষ্ঠ লোকদের এসএমএস করেন।

এমপির মোবাইল থেকে করা এসএমএসে বোঝানো হয় যে, তিনি (এমপি) ভিআইপিদের সঙ্গে ভারতে মুভমেন্টে আছেন। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যাতে তদন্তের জন্য ওইসব স্থানকে গুরুত্ব দেয়। এটা ছিল মূলত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিভ্রান্ত করার কৌশল।

সূত্র আরও জানায়, সিয়ামের মূল দায়িত্বই ছিল বাইরে। তাকে ঘটনাস্থল সঞ্জীবা গার্ডেনসেও নেওয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পর এমপির খণ্ডিত হাড়গুলো খালে ফেলার ক্ষেত্রে জাহিদ ওরফে জিহাদের সহযোগী ছিল সে। পরে ধরা পড়ার ভয়ে সে নেপাল চলে যায়। অন্যদিকে রিমান্ডে থাকা অপর আসামি সেলিস্তি রহমানকে ডিবির পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়-‘আপানি শাহীনের বান্ধবী। শাহীন দেশে চলে আসার পরও আপনি কেন কলকাতায় থেকে গেলেন। পরে আপনি দেশে আসেন হত্যাকাণ্ডের মূল সমন্বয়কারী আমানুল্লাহর সঙ্গে। এ থেকেই মনে হচ্ছে-আপনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’ জবাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কেনাকাটা করার জন্য থেকে গিয়েছিলাম।’ সেলিস্তির এই বক্তব্যে ডিবি কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। কারণ শাহীন দেশে ফেরার আগে অন্তত ১০ দিন কলকাতায় ছিলেন। ওই পুরো সময় তিনি শাহীনের সঙ্গেই ছিলেন। কেনাকাটার জন্য ওই ১০ দিনের পর আরও সময় প্রয়োজন-সেটা স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছে না।

গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। কলকাতার ব্যারাকপুরসংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন আনার। পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে মর্মান্তিকভাবে খুন হন এমপি আনার। বাসাটি খুনিরা ভাড়া নেয় ১১ মাসের জন্য। এমপি খুনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিনই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে দুই দেশেই। ইতোমধ্যেই কলকাতার পুলিশ সদস্যরা ঢাকা এসে বাংলাদেশে গ্রেফতারকৃত আসামিদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। বাংলাদেশের ডিবির একটি দলও কলকাতায় সফর করে সেখানে গ্রেফতার জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি এমপির দেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছেন। ডিবির দেওয়া তথ্যেই কলকাতা সিআইডি সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকে অভিযান চালিয়ে কয়েক টুকরো মাংস উদ্ধার করেছে।

ডিবি হেফাজতে থাকা গ্রেফতারকৃত তিন আসামির আট দিনের রিমান্ড বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে বলে ডিবিকে জানালেও স্বীকারোক্তি না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। কারণ আসামিদের মধ্যে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ এবং তানভীর ভূঁইয়া পেশাদার অপরাধী। তাই আদালতে গিয়ে তারা জবানবন্দি নাও দিতে পারে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। তাদের এই আশঙ্কা সত্য হলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ডিবি। এক্ষেত্রে আসামিদের ফের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হতে পারে আদালতে।

এদিকে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংকে যে মাংসের টুকরো পাওয়া গেছে তা সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভারতের কলকাতা থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার বিকালে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, এমপি আনারের মরদেহ বা দেহাবশেষ না পাওয়া গেলে মামলাটি নিষ্পত্তি করা কঠিন হতো। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, উদ্ধার করা মাংসের টুকরোগুলো ভিকটিমের। কারণ অন্য কারও মাংস সেখানে এভাবে ফ্ল্যাশ করবে কেন? ফরেনসিক রিপোর্ট পেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে তিনি বলেন, আমাদের যত ধরনের তথ্যের দরকার, কলকাতায় গিয়ে সবই পেয়েছি। আমরা সফলতা নিয়েই ফিরেছি। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ এখনো পরিষ্কার নয়-উল্লেখ করে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, এলাকার আধিপত্য, রাজনৈতিক বিরোধ-সব বিষয়কে সামনে রেখেই তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, একজন ফ্ল্যাটে ফ্লাশের আওয়াজ শুনেছে। সেই তথ্য থেকেই আমরা ওয়াটার থিউরি অ্যাপ্লাই করেই মরদেহের খণ্ডিতাংশের সন্ধান পেয়েছি। এটাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল। তিনি আরও বলেন, এ মামলার আসামি একজন যুক্তরাষ্ট্রে, আরেকজন নেপালে। তাদের ফেরানোর চেষ্টা চলছে। শাহীনের জন্য ইন্টারপোলে আর সিয়ামের জন্য নেপাল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। কলকাতার পুলিশকেও বলেছি শাহীনকে ফেরাতে উদ্যোগ নিতে।

হারুন অর রশীদ বলেন, মামলায় ভিকটিমের মরদেহ বা মরদেহের অংশবিশেষ না পাওয়া গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তার সুরতহাল, ভিসেরা ও মেডিকেল রিপোর্ট দিতে বেগ পেতে হয়। আমরা কলকাতায় গিয়ে আমাদের হাতে গ্রেফতার আসামিদের তথ্য ক্রসচেক করেছি। এছাড়া কলকাতায় গ্রেফতার আসামির তথ্য যাচাই-বাছাই করেছি। কলকাতা সিআইডিকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মেলানোর চেষ্টা করেছি। আলামত উদ্ধার, পারিপার্শ্বিক ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করায় আনার হত্যার তদন্ত শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।

এমপি আনার খুনের রহস্য উদঘাটনে ২৬ মে ডিএমপি ডিবিপ্রধানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় যায়। পাঁচ দিন পর তারা দেশে ফিরলেন। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন-ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহীদুর রহমান। এদিকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এমপি পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েকদিন ধরেই কলকাতা যাওয়ার চেষ্টাা করছেন। তবে ভিসা জটিলতার কারণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা সেখানে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন নিহত এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ।

হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের - dainik shiksha হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস - dainik shiksha নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর - dainik shiksha অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045430660247803