শতভাগ উৎসব ভাতা না পাওয়ার কারণে পাঁচ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষক সমাজ এমপিওভুক্ত শিক্ষক। সারা দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের (বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসার) ৯৩ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক শতভাগ উৎসব ভাতা থেকে বঞ্চিত। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমানে শতভাগ উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু ঠিক কী বিবেচনায় বা কোন অজানা কারণে শিক্ষক সমাজের সবচেয়ে বড় অংশ অর্থাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কেনো উৎসব ভাতা থেকে বঞ্চিত তা বোধগম্য নয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২৫ ভাগ উৎসব ভাতা পান। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। শতভাগ উৎসব ভাতার দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন সময় আন্দোলন, মানববন্ধন, সরকারকে স্মারকলিপিসহ বিভিন্নভাবে সোচ্চার হয়েছে এবং হচ্ছে। এক কথায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই ২৫ ভাগ উৎসব ভাতা অযৌক্তিক, বৈষম্যমূলক, অপ্রাসঙ্গিক ও বর্তমান বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সরকারি-বেসরকারি ও সমমানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি শতভাগ উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা কেনো শতভাগ উৎসব ভাতা পাবেন না? বাংলাদেশের আর কোনো প্রতিষ্ঠানে ২৫ ভাগ উৎসব ভাতা আছে বলে জানা নেই। উৎসব ভাতা এটা তো কম-বেশি দেয়া বা বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কী ‘এক-চতুর্থাংশ উৎসব’ পালন করবেন? পৃথিবীর আর কোনো শিক্ষক সমাজের জন্য এতো কম উৎসব ভাতা আছে বলে শুনিনি। উৎসব তো উৎসবই, এটা কারো জন্য কম আবার কারো জন্য বেশি- এটা হতে পারে না। উৎসব ভাতা তো সবার জন্য সমান হওয়ার কথা।
এমপিওভুক্ত অনেক শিক্ষককে এটাও বলতে শোনা যায় যে, হয় শতভাগ উৎসব ভাতা দেয়া হোক অন্যথায় বিদ্যমান ২৫ ভাগ উৎসব ভাতাপ্রাপ্তি বন্ধ করা হোক! কোনো কোনো শিক্ষক মনের কষ্টে প্রাপ্ত ২৫ ভাগ উৎসব ভাতা সরকারের কোষাগারে চালানের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে জেনেছি। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অন্যসব সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীদের মতো মূল বেতনের ২০ ভাগ নববর্ষ ভাতা ও বার্ষিক ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন, তাহলে শতভাগ উৎসব ভাতা পেতে সমস্যা কোথায়? এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এমনিতেই সবমিলিয়ে বেতন-ভাতা কম পান। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চরম বাস্তবতায় শিক্ষকদের কথা কেউ ভাবেন না।
শিক্ষাদানের মাধ্যমে দেশের সন্তানদের তথা দেশকে এগিয়ে নিজে যান শিক্ষকরা। বছরের বড় উৎসব ঈদ-পূজায় উৎসব ভাতা কম পেলে মানুষ গড়ার কারিগররা কীভাবে চলবেন? বেতন-উৎসব ভাতা কম থাকার কারণে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে অনীহা প্রকাশ করেন। কিন্তু সরকার সেবাটা চান সর্বোচ্চ মানের।
সম্প্রতি ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’ জারির পর শতভাগ উৎসব ভাতা পাওয়ার বিষয়টি আরো জোরালোভাবে সামনে আসে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি জারি করা নীতিমালার শিক্ষক ও কর্মচারীদের (স্কুল ও কলেজ) বেতন-ভাতা নির্ধারণ অনুচ্ছেদের ১১.৭ এর (ঙ) অংশে বলা হয়েছে-‘শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন/ উৎসব ভাতার নির্ধারিত অংশ/বৈশাখী ভাতার নির্ধারিত অংশ সরকারের জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫/ সরকারের সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে অথবা সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে।’ সহজ অর্থ হলো, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা পাওয়ার কথা নীতিমালায়ও স্পষ্ট উল্লেখ আছে। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবও এ ব্যাপারে অবগত। শতভাগ উৎসব ভাতা নিয়ে সংসদে ও সংসদের বাইরে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। তাহলে শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা পেতে বাধাটা কোথায়? মূলত অভাবটা হলো আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে আর কতোকাল উৎসব ভাতা-বৈষম্য চলতে থাকবে? মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের প্রতি উৎসব ভাতা-বৈষম্য অচিরেই দূর করা হোক। শিক্ষকদের মনে চাপা দুঃখ-কষ্ট থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সার্বিকভাবে শতভাগ সফলতা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে। আসন্ন ঈদের আগেই শতভাগ উৎসব ভাতাপ্রাপ্তি কার্যকরের খবর ৫ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষকের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। নবগঠিত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকবান্ধব হিসেবে সুপরিচিত। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ বোনাসপ্রাপ্তির ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষক, লৌহজং বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।