দৈনিক শিক্ষাডটকম, বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে সংসদ সদস্য (এমপি) সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজলকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী করায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সজলকে প্রার্থী না করতে উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ১১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। এর অনুলিপি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও বগুড়া প্রেস ক্লাবে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন-উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুত তারিক মোহাম্মদ, নারচী ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বান্টু, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাফি মন্ডল, চালুয়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বাদশা, কাজলা ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এসএম রফিকুল ইসলাম, কর্ণিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দিপন, বোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান আসাদ, কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাছেদুউজ্জামান রাসেল, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সুজন, ভেলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম সুজন ও হাটশেরপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূর মেহেদী হাসান আলো। তবে চন্দনবাইশা ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুন নবী হিরো এতে স্বাক্ষর করেননি।
চিঠিতে ইউপি চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেছেন, উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অথচ বগুড়া-১ আসনের এমপি সাহাদারা তার ছেলে সজলকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বানানোর জন্য প্রচারে নেমেছেন। দলীয় লোকজনকে ভয় দেখিয়ে ছেলের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছেন। হাটশেরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এফাজ উদ্দিন গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় প্রশাসনকে চাপ দিয়ে তার ইজারা নেওয়া বালু জব্দ করান। এরপর তাকে সজলের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছেন। এমপির ছেলের পক্ষে কাজ করতে অস্বীকার করায় চাকরি থেকে বরখাস্ত, নানাভাবে ভয় দেখানো ও হয়রানিমূলক বদলি করা হচ্ছে। এমপি তার ভাই, ছেলে ও ভাগিনাকে দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করাচ্ছেন।
চেয়ারম্যানরা আরও বলেন, আমরা মনে করছি এমপির ছেলের পক্ষে কাজ করা যাবে না। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। সজল আড়াই বছর আগে দলীয় কার্যালয়ে প্রবীণ রাজনীতিক মুঞ্জিল আলী সরকারকে বাস্টার্ড বলে গালি দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ৭ মার্চের সভায় এমপির উপস্থিতিতে সজল বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম মন্টুকে গালিগালাজ করেন ও মারতে উদ্যত হন। সজলের এহেন আচরণে দলমত নির্বিশেষে সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সজল একাধিক বিয়ে করলেও স্ত্রী রাখতে পারেননি।
নেতারা বলেন, এমপি সাহাদারা মান্নান সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় পরিবারতন্ত্র কায়েম করতে চলেছেন। স্বামী এমপি ছিলেন, তিনি নিজে এমপি, তার ছেলেকে সারিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান করার চেষ্টা করছেন। তার ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটনকে সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান করেছেন। আবারও তাকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হয়েছে। তার পরিবারের অনেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও দলীয় পদে আসীন হয়েছেন। তাই আমরা সজলকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট করা থেকে বিরত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানাই। অভিযোগ প্রসঙ্গে এমপি সাহাদারা মান্নান বলেন, ছেলে ও আমার উপর আনা সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ বিষয়ে আমি মানহানির মামলা করব।