বরিশাল-২ আসনের (উজিরপুর-বানারীপাড়া) সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে তার সংসদীয় আসনের দুই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগে অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে উপজেলা দুটির বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য না হয়েও এমপি শাহে আলম তালুকদার নিয়োগ বোর্ড আয়োজিত পরীক্ষায় সরাসরি নিজে হাজির হয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন উজিরপুরের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের (ম্যানেজিং কমিটি) সভাপতি।
তারা বলেছেন, এমপি শাহে আলমের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি না দেওয়া হলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে উজিরপুর উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
হারতা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনিল বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে চারটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় এমপি শাহে আলম নিজে উপস্থিত ছিলেন। একটি পদে তার (এমপি শাহে আলম) পছন্দের প্রার্থী ছিলেন, সেই প্রার্থী পরীক্ষায় প্রথম হয়ে চাকরি পেয়েছেন। নিয়ম ছাড়াই এভাবে দীর্ঘদিন ধরে এমপি শাহে আলম নিজে নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত থাকছেন।’
একই ধরণের অভিযোগ করেন উপজেলার সকরাল আ. মজিদ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাকোঠা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম মৃধা। তিনি বলেন, ‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমপি শাহে আলম সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। শাহে আলম অযাচিতভাবে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হয়ে প্রশ্ন করেন। তার কারণে উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলায় শত শত নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা।’
চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একজন করে জনবল নিয়োগের পরীক্ষা ছিল গত ১৮ মার্চ বরিশাল জিলা স্কুলে। সেখানে এমপি শাহে আলম সকাল ১০টার দিকে উপস্থিত হয়েছিল তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার আশায়। কিন্তু তার অনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি অন্য সব প্রার্থী টের পেয়ে পরীক্ষা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। টানা ছয় ঘণ্টা বসে থেকে শাহে আলম তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে চলে যান। বর্তমানে এই নিয়োগ স্থগিত রয়েছে।’
একই দিন বরিশাল জিলা স্কুলে রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েক পদে জনবল নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। সেখানেও এমপি শাহে আলম হাজির হয়ে হস্তক্ষেপ করে বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ সুখেন্দু শেখর। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে পাঁচটি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা গ্রহণের দিন এমপি শাহে আলম তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হন। তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নিয়োগ নিয়ে আমার সঙ্গে প্রকাশ্যে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এমপি। সে কারণে শেষমেষ নিয়োগ পরীক্ষা আর হয়নি।’
একই অবস্থা বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে একজনকে নিয়োগের কথা ছিল। কিন্তু এমপি শাহে আলমের কারণে সেখানেও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করে এমপি শাহে আলম আমাদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তার কারণে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এমপি শাহে আলমের কারণে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সুখেন্দু শেখর ও অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলামের সঙ্গে এমপি শাহে আলম বাগ্বিতণ্ডা করে নিয়োগ স্থগিত করার নির্দেশ দিয়ে চলে যান।’
নিয়োগ বোর্ডের সদস্য না হয়েও নিয়োগ বোর্ডে এমপি শাহে আলমের হাজির হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এই নিউজ পত্রিকায় উঠলে (প্রকাশিত হলে) তার দায়ভার আমার ওপর পড়বে।’ এ কথা বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে এমপি শাহে আলমের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন বলে জানান। এই প্রতিবেদককে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। তখন তিনি সব বলবেন বলে জানান।