বাড়ি ভাড়ার নামে কোটি টাকা লোপাট, পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) আবুল হাসান এম সাদেকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান জাফর সাদেক, সাবেক উপাচার্য আবুল হাসান এম সাদেক ও সদস্যসচিব সালেহা খাতুনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে কয়েক শ কোটি টাকা বিদেশে পাচার এবং নামে-বেনামে শতাধিক এফডিআর করা ছাড়াও জমি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন।
দুদকের সূত্র আরও জানায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ নভেম্বর এসব অভিযোগ জমা পড়ে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে। যাচাই-বাছাই শেষে চলতি বছর মার্চে অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়। অনুসন্ধান করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী মুসা জেবিন। আপাতত প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে।
জানতে চাইলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ সাদেক বলেন, অনুসন্ধান চলা অবস্থায় কিছু বলা যায় না।
দুদক সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত ৯ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে কমিশন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে বাড়ি ভাড়ার নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে, ক্যাম্পাস না থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাস দেখিয়ে ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তির নামে ফ্ল্যাট কেনা, ট্রাস্টের অনুকূলে বাড়িভাড়া পরিশোধ, বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও সনদে অবৈধভাবে স্বাক্ষর করা, নামমাত্র বেতনে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশের আনাচকানাচে দূরশিক্ষণ কেন্দ্র চালু, এমনকি সৌদি আরবেও আউটার ক্যাম্পাস খুলে বসে। এতে সরকার বা কমিশনের অনুমতি ছিল না।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিজের বাসাকে ক্যাম্পাস হিসেবে দেখিয়ে সাবেক উপাচার্য আবুল হাসান এম সাদেক ১০ বছরে অন্তত ২০ কোটি ৬৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৬২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ২৮ নম্বর সড়কের বাড়িকে ক্যাম্পাস হিসেবে দেখিয়ে ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ টাকা নিয়েছেন। অথচ এ দুই বাড়ি ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার হয়নি। ইউজিসি থেকেও ক্যাম্পাস হিসেবে এগুলোর অনুমোদন ছিল না।
ওই প্রতিবেদনে এসব ঘটনায় জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং দুদককে অনুসন্ধান করার সুপারিশও করা হয়।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের রেজিস্ট্রার একেএম এনামুল হক বলেন, কিছু তথ্য চেয়ে দুদক থেকে একটি চিঠি এসেছে। এগুলো সংগ্রহের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জমা দেওয়া হবে।