এসএসসি-এইচএসসিতে সনদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে নম্বরপত্র - দৈনিকশিক্ষা

এসএসসি-এইচএসসিতে সনদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে নম্বরপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ উন্মাদনার অবসান ঘটছে শিগগিরই। ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এসএসসিতে থাকছে না জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ)। এইচএসসিতে পুরোপুরিভাবে জিপিএ উঠে যাবে ২০২৮ -এ। জিপিএ না থাকলে কীভাবে শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ হবে তা চূড়ান্ত করতে আরও তিন বছর সময় নিতে চায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অর্থাৎ ফল প্রকাশের পদ্ধতি ঠিক করতে আগামী ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চলবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

এনসিটিবি সূত্র গত বুধবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানায়, চলতি বছর থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। আর নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীরা ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ওই বছর থেকেই জিপিএ তুলে দেওয়া হবে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মূল্যায়নে নতুন কোনো পদ্ধতি চালু হবে।

জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় গত মাসে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়ন হয়েছে। তবে এ মূল্যায়ন গতানুগতিক পদ্ধতিতে হয়নি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হয়েছে উৎসবের মাধ্যমে। তারা স্কুলে গিয়েছে আনন্দের সঙ্গে। পরীক্ষায় বসেছে খেলার ছলে। আর শিক্ষার্থীদের প্রচলিত গ্রেড পয়েন্টেও মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা নতুন শিক্ষাক্রমে বেশি ভালো করেছে, তাদের দেওয়া হয়েছে ‘ত্রিভুজ’। যারা ভালো করেছে, তাদের দেওয়া হয়েছে ‘চতুর্ভুজ’। আর যাদের উন্নতি প্রয়োজন, তাদের দেওয়া হয়েছে ‘বৃত্ত’।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের সামষ্টিক মূল্যায়নে যে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ বা বৃত্ত দেওয়া হচ্ছে এতেও হয়তো একটা বিভেদ হতে পারে।

এনসিটিবির চেয়ার‌ম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল  ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কীভাবে করা হবে তা আমরা ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে চূড়ান্ত করব। কারণ ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীরা প্রথম এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তবে এটা ঠিক, নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে তাদের গতানুগতিক মূল্যায়ন বা জিপিএ আর থাকছে না।’

শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখা যাবে অনেক দেশই ৩০ বছর আগে এসএসসি বা এইচএসসি পর্যায়ে জিপিএ বা গ্রেডিং তুলে দিয়েছে। আমরাও সেখানে যেতে চাই। কারণ সব শিক্ষার্থীরই মেধা থাকে। তবে সেই মেধার বহিঃপ্রকাশ একেকজন একেকভাবে করে। তাই আমরা চাই না, কোনো শিক্ষার্থীর মন খারাপ হোক।’

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। এই পদ্ধতিতে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৫, লেটার গ্রেড এ প্লাস। এটাই সর্বোচ্চ গ্রেড। এরপর ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৪, লেটার গ্রেড এ। ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫০, লেটার গ্রেড এ মাইনাস। ৫০ থেকে ৫৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩, লেটার গ্রেড বি। ৪০ থেকে ৪৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ২, লেটার গ্রেড সি। ৩৩ থেকে ৩৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট এক, লেটার গ্রেড ডি। আর শূন্য থেকে ৩২ পাওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেড পয়েন্ট জিরো, লেটার গ্রেড এফ। জিপিএ ১ পেলেই শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কোনো বিষয়ে এফ গ্রেড না পেলে চতুর্থ বিষয় বাদে সব বিষয়ের প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টকে গড় করেই একজন শিক্ষার্থীর লেটার গ্রেড ঠিক করা হয়।

তবে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের আগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ চালু ছিল। একটি বিষয়ে ৮০ নম্বরের ওপরে পেলে সেটা ছিল ‘লেটার মার্ক’। সব বিষয়ে গড়ে ৮০ নম্বরের ওপরে পেলে সেটা ছিল ‘স্টার মার্ক’। আর একটি শিক্ষা বোর্ডে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ২০ জনকে দেওয়া হতো ‘বোর্ড স্ট্যান্ড’ উপাধি।

জানা যায়, জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (জিসিএসই) বা ‘ও’ লেভেল পরীক্ষায় কেমব্রিজ কারিকুলামে ফল মূল্যায়ন করা হয় ‘এ-স্টার, এ, বি, সি থেকে জি’ পর্যন্ত আট ক্যাটাগরিতে। তবে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এডেক্সেল কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ শুরু হয়। নতুন গ্রেডিং পদ্ধতি ইংরেজি ভাষার দক্ষতা নির্ণয়কারী টেস্ট আইইএলটিএসের ফলের মতো। সর্বোচ্চ ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থী পায় ৯, পর্যায়ক্রমে তা ১ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়।

জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন থাকবে। এছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা ও শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে। আর দশম শ্রেণি শেষে ওই শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে ৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৭০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। নৈর্বাচনিক ও বিশেষায়িত বিষয়ে কাঠামো ও ধারণায়ন অনুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক, ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। এছাড়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর প্রতি বর্ষ শেষে একটি করে পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে এনসিটিবি কাজ করছে। তারা যেভাবে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করবে বোর্ডগুলো তা বাস্তবায়ন করবে।’

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035820007324219