দৈনিক শিক্ষাডটকম, শেরপুর : শেরপুরে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার করার অপরাধে কেন্দ্র সচিব ও হল সুপারসহ ১৯ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সেই সাথে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর আদান-প্রদান ও নকলের দায়ে ২০ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তিন উপজেলার বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
অব্যাহতি প্রাপ্তদের মধ্যে শ্রীবরদীর ৫ জন, ঝিনাইগাতীর ৭ জন ও নালিতাবাড়ীর ৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। আর বহিষ্কার পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নালিতাবাড়ীর ১৮ ঝিনাইগাতীর ২ জন।
জানা যায়, আজ মাদরাসার দাখিলের গণিত ও এসএসসির ইংরেজি ২য় বিষয়ে পরীক্ষা চলছিল। নালিতাবাড়ী উপজেলার তারাগঞ্জ ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী স্মার্টফোনে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে প্রশ্নপত্রের ছবি উঠিয়ে বাইরে পাঠিয়ে উত্তর সংগ্রহ করে খাতায় লিখছিল। পরে ওই পরীক্ষার্থীর মোবাইল হাতে নেওয়ার পর একই মোবাইল থেকে আরও একটি মোবাইলে ওয়াফাই যুক্ত দেখে অন্য পরীক্ষার্থীদের সার্চ করে। এসময় ১৫ জন পরীক্ষার্থীকে একইভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর সংগ্রহ করার প্রমাণ মেলে। এসব স্মার্ট ফোন পরীক্ষার্থীরা পায়ের উরুতে রাবার দিয়ে বেঁধে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে অসদুপায় অবলম্বন করছিল। একই সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার ও নকলের দায়ে ওই কেন্দ্রের মোট ১৮ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় দায়িত্বরত মোট ৫ জন শিক্ষককে।
ওই কেন্দ্রে মোবাইল ফোনে অসদুপায় অবলম্বনকারী ১৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ জনই এক বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল। ওই ঘটনায় অসদুওপায়ে ব্যবহৃত ১৫টি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে।
এ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ হল পরিদর্শনে গেলে বিষয়টি তাঁর নজরে আসলে এ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেন তিনি।
অন্যদিকে, নালিতাবাড়ীর আব্দুল হাকিম স্মৃতি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালে পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইলিশায় রিছিল। এসময় গেল বছর অকৃতকার্য হওয়া পরীক্ষার্থীদের রোল নম্বর উল্লেখ করে সিট নির্ধারণ না করায় দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইলিশায় রিছিল জানান, মোবাইল ও নকল ব্যবহারের কারণে নালিতাবাড়ীতে ১৮ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কার এবং ৫ জন শিক্ষককে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এদিকে, শ্রীবরদী উপজেলার আকবরিয়া পাবলিক পাইলট ইন্সটিটিউট কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার করার অপরাধে ৫ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার শুরুর কিছুক্ষণ পর শিক্ষকদের সার্চ করলে মোবাইল পাওয়া যাওয়া তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, ‘নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্বরত ৫ জন শিক্ষককে দুই বছরের জন্য পরীক্ষার সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নকলমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা নিতে আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।’
এছাড়া, ঝিনাইগাতীতে দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্রে শিক্ষকদের উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় এ দণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়। সচিব, হল সুপার ও ৫ শিক্ষককে অব্যাহতি, ২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া জানান, পরীক্ষা চলার সময় পরীক্ষার সাথে যুক্ত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারির দ্বায়িত্ব অবহেলা কোন ভাবেই কাম্য নয়। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে বাকি পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করা হবে।
শেরপুরের তিন উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে ১৯ শিক্ষককে অব্যাহতি, ২০ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার করা হয়।