ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সঙ্গে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রধানের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের অভিযোগ, একদিন আগে ঘোষণা দিয়ে একদল শিক্ষার্থী ভাঙচুর করলো, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিতে পারার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রধানকে নিতে হবে।
ওই কলেজেরই এক শিক্ষার্থী বলেন, সকাল থেকেই আমরা আমাদের কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। তখন আমরা ছিলাম ২০০ জনের মতো, কিন্তু হঠাৎ করেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী এসে একসঙ্গে হামলা চালান। এ সময় কারো হাতে রামদা, কারো হাতে বিদেশি অস্ত্র এমনকি বোমাও ছিলো। ফলে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী বন্ধু-বান্ধব মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এই সুযোগে তারা কলেজে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। জানা যায়, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ড. মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর প্রতিবাদে মোল্লা কলেজেসহ ৩৫টি কলেজ একত্রে আন্দোলন করতে গিয়েছিলো। এটি শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। তারা শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে প্রতিবাদ জানাবেন। আবার সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা যে তাদের পিটিয়েছেন সেটাও শিক্ষার্থীদের কাজ নয়।
মোল্লা কলেজের প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট, ল্যাব, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুলের শিক্ষার্থীরা এসে তছনছ করে ফেলেছেন। তার আগে মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তারও কয়েক দিন আগে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ঢাকা ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা।
এসন অসহিষ্ণুতা সাম্প্রতিককালে বেড়ে চলেছে। গত সপ্তাহে তেজগাঁওয়ের মোড়ে সংষর্ষে জড়ান বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। চা খাওয়ার সময় কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে, এতে প্রায় ৩০ জন আহত হন। এভাবে সামান্য ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা একে অপরের ওপর শক্তি প্রয়োগের এবং পেশিশক্তি প্রদর্শনের খেলায় মেতেছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বহু শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়েছে, অনেকে সারাজীবনের জন্য কোনো না কোনো অঙ্গ হারিয়েছেন, কেউ কেউ এখনো হাসপাতাল কিংবা বাড়ির বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এগুলো চিন্তা না করে রক্ত গরম করা কাজ শিক্ষার্থীদের যে বন্ধ করতে হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অর্জিত শিক্ষার ফল অবশ্যই এমন হওয়া উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই মানবিকতা, ধৈর্য, সহমর্মিতা শিখতে হবে। আর এসব শেখাতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হবে হবে শিক্ষক, অভিভাবকদের।
তা না হলে এই নৈরাজ্য জাতিকেই গ্রাস করবে। কাজেই শিক্ষার্থীদের এভাবে পেশিশক্তি প্রদর্শনের খেলায় জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপট পাল্টে দেয়া খুবই জরুরি। রাষ্ট্র নিশ্চয়ই বিষয়টিকে গুরত্ব দিয়েই ভাবছে।
লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক