নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের কওমি মাদরাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব, মাদরাসায় জঙ্গিবাদ তৈরি করা হয় কী না- এসব তথ্য কওমি মাদরাসাগুলোতে চাওয়া হচ্ছে। এছাড়াও নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন হেফাজতের নায়েবে আমির এবং দেওনা পীর ও কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। এসময় কওমি মাদরাসাকে সার্বজনীন স্বীকৃতিসহ ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে কওমি মাদরাসার কাছে চিঠি দিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে কওমি মাদরাসায় কোনো জঙ্গিবাদের বিষয় আছে কি না সেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে।
চিঠির সমালোচনা করে মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও কওমি মাদরাসার প্রশংসা করে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দিয়েছেন। কওমি মাদরাসায় কখনই জঙ্গিবাদ লালন করা হয়নি এর প্রমাণ আমরা দেখিয়েছি। তারপরও নির্বাচনের আগে কেন এ ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা সরকারকে দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কওমি মাদরাসাকে উত্তপ্ত করার একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই কওমি মাদরাসা উত্তপ্ত হলে দেশ, নির্বাচন ও রাজনৈতিক অঙ্গন প্রভাবিত হবে।
এসময় কওমি মাদরাসার বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ৭টি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে ধর্মীয় শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এ অবস্থায় সবার জন্য সার্বজনীন ধর্মীয় শিক্ষার অধিকার পুনরুদ্ধার, কওমি শিক্ষাব্যবস্থার সুরক্ষা, স্বকীয়তা বিস্তার, কওমি শিক্ষা ও শিক্ষকের মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা।
সংবাদ সম্মেলন দাবি করা হয়, দেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিশু-কিশোর বিদ্যালয়গামী। এখান থেকে মাত্র দশ লাখ শিক্ষার্থী মাদরাসায় আর বাকী তিন কোটি চল্লিশ লাখ শিক্ষার্থী স্কুলগামী। এই বিপুল শিক্ষার্থীদের জন্য বুনিয়াদি দ্বীনী শিক্ষা, আমল আখলাক গঠন নিয়ে আমাদের চিন্তা করা আবশ্যক।
১৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমিক পর্যন্ত দ্বীনী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, দ্বীনা শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব আইন ও বিধি-বিধান বাতিল না সংশোধন করা, মাদরাসা মসজিদ দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্পূর্ণভাবে আয়কর মুক্ত রাখা এবং কওমি মাদরাসা সব মনস্তান্তিক চাপের ঊর্ধ্বে রাখা।
এছাড়াও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে আলেমদের সম্পৃক্ত রাখা এবং জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নকারী ও বাস্তবায়নে শিক্ষা কমিশনে কওমি আলেমদের সম্পৃক্ত করা।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেম ওলামাদের নামে করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং কারাবন্দি আলেমদের নিঃশর্ত মুক্তি চাওয়া হয়। সোমবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চরমোনাই পীরের ওপরে হামলা নিন্দা জানিয়ে এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আশেকে, মহাসচিব মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ হামেদী, সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল বাসেত খান সিরাজগঞ্জী, মাওলানা মনিরুল ইসলাম, মাওলানা জুবায়ের আহমেদ, মাওলানা জসিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।