যোগদান করতে এসে বারান্দায় বসে অফিস করলেন সরকারি ইসলামপুর কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ ড. ছদরুদ্দিন আহমদ। এ ঘটনায় কলেজ ও এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ১৪শ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা।
জানা গেছে, গত ৬ জুন সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে শিক্ষা ক্যাডারের নিয়োগপ্রাপ্ত শখিপুর সরকারি মুজিব কলেজের অধ্যক্ষ ড. ছদরুদ্দিন আহমদকে সরকারি ইসলামপুর কলেজে সংযুক্ত করা হয়। ৭ জুন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগ দিয়ে ৮ জুন যথাসময়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। ওই দিন নবাগত অধ্যক্ষকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
তবে নতুন অধ্যক্ষকে বরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (উপাধ্যক্ষ) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
রবিবার (১১ জুন) অধ্যক্ষ ড. ছদরুদ্দিন আহমদ কলেজ ক্যাম্পাসে এলে অধ্যক্ষ নিজ কক্ষটি বন্ধ দেখতে পান। ফলে কলেজের বারান্দায় বসে অফিসিয়াল কাজ পরিচালনা করেন তিনি। এ সময় অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ উভয়ের অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বারান্দায় বসে অফিসিয়াল কাজ পরিচালনা করছেন। আর শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঝটলা করে আছেন।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ড. ছদরুদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজে যোগদান করেছি। আজ অফিস করতে এসে দেখতে পাই অধ্যক্ষের কক্ষের তালা ঝুলছে। স্টাফদের কাছে জানতে পারি তালার চাবি নাকি হারিয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে আমি বারান্দায় বসে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা
করছি।
তিনি আরও জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকায় এবং প্রশাসনের উপস্থিতিতি ছাড়া অফিসকক্ষের তালা ভেঙে আমি অফিসে ঢুকতে পারি না। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, প্রায় দেড় যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী ইসলামপুর কলেজটি চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে। এর আগে সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান সালাউদ্দিন আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি আদালতের নির্দেশে একাধিকবার কলেজে যোগদান করতে এসে বাধাপ্রাপ্ত হন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নবাগত অধ্যক্ষ ড. ছদরুদ্দিন আহমদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় অসুস্থ। তাই আমি কর্মস্থলের বাইরে আছি।’
এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমি অফিসের কাজে ঢাকায় রয়েছি। আমি বাইরে থাকলে আমার কক্ষ বন্ধ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া তিনি (অধ্যক্ষ) অনলাইন কাগজ নিয়ে যোগদান করেছেন। ডিজি অফিস থেকে কোনও অর্ডার না পাওয়ায় আমি আমার কার্যালয়ে কাউকে বসতে দিতে পারি না।’
উল্লেখ্য, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ভাঙনকবলিত ইসলামপুরের দরিদ্র-অসহায় মানুষের জন্য এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামপুর-গুঠাইল সড়কের পাশে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামপুর ডিগ্রি কলেজ। ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটিকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগস্ট জাতীয়করণ করা হয়।
বর্তমানে এই কলেজে অনার্স ১২ বিভাগ, মাস্টার্স ৪ বিভাগসহ ডিগ্রি, এইচএসসি জেনারেল, কারিগরি ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। কলেজে ১২৮ জন শিক্ষক ও ৫৭ জন কর্মচারীর কর্মস্থান রয়েছেন।