দৈনিক শিক্ষাডটকম, কক্সবাজার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা কথা দিয়েছিলাম, কথাটা রাখলাম। আজকের দিনটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য গর্বের দিন।
গতকাল শনিবার দুপুরে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেললাইনে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। একইসঙ্গে কক্সবাজারে আইকনিক ঝিনুক স্টেশনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় সরকার প্রধান বলেন, আপন সম্পদ মনে করে যত্ন নিয়ে এর ব্যবহার করবেন। সারা বাংলাদেশে অনেক রেলস্টেশন রয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারের এই ৬ তলা রেলস্টেশনটি সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও সুন্দর।
শেখ হাসিনা বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় একটি দাবি শুনে আসছি, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন ছিলো। এই দোহাজারী থেকে কক্সবাজার কবে রেললাইন আসবে? আজকে এটা করতে পারায় আমি খুবই আনন্দিত। এটা রামু পর্যন্ত করা হয়েছে এবং গুমধুম পর্যন্ত করার কথা। এ জন্য আমরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসতে চাই। ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে আমরা সংযুক্ত হতে চাই। সেটা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই প্রকল্প বাস্তায়নের সময় ৩৯টি মেজর ব্রীজ করতে হয়েছে, ২৪৪টি ছোটও মাঝারি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে, ৯টি স্টেশন ও আধুনিক কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিগনালিং ব্যবস্থা ইনস্টল করা হয়েছে। একটি ওভারপাস ও দু’টি আন্ডারপাসও নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রেললাইনটা চকোরিয়া থেকে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যাতে সংযুক্ত হয় তার ব্যবস্থাও আমরা করে দেবা। যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো উন্নত হয়।
সরকার প্রধান বলেন, সরকার রেল যোগাযোগের মাধ্যমে সমগ্র দেশকে কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি রেল পরিষেবা, গতি ও পরিবহনকে বিশ্বমানের করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। দেশবাসী এখন কক্সবাজার থেকে পঞ্চগড়, রাজশাহী, দেশের দক্ষিণাঞ্চল, সুন্দরবন পর্যন্ত রেলপথ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার অথবার রাজশাহী থেকে কক্সবাজার, দক্ষিণাঞ্চল সুন্দরবন থেকে কক্সবাজার, এমনকি গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশ থেকেই যাতে সহজে কক্সবাজার আসা যায় সেই পদক্ষেপও আমরা নেবো। এই যোগাযোগগুলো সম্পন্ন হলে আমাদের পর্যটনের ক্ষেত্রে একটা বিরাট পরিবর্তন আসবে।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মিলে খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল চলাচলের উদ্বোধন করেছি। যে লাইনটা এক সময় খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুর ডুয়েল গেজ লাইনও নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলের যাত্রীসেবা ও পণ্য পরিবহনের মানোন্নয়নে আরো ৪৬টি নতুন ব্রডগেজ লোকামোটিভ, ৪৬০টি নতুন যাত্রীবাহী ক্যারেজ, ২০০টি নতুন মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ, ১৩১০টি নতুন ওয়াগন সরবারহের উদ্যোগও সরকার হাতে নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৩/৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাতে উন্নীত হয় সেই পদক্ষেপই নেয়া হয়েছে এবং সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিন সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান। বেলা সাড়ে ১১টার তিনি পৌঁছান আইকনিক রেলস্টেশনে। সেখানে রাখাইন শিল্পীরা নাচ-গানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেন। এরপর পাঁচ হাজার সুধীজনের উপস্থিতিতে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির। এরপর ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে রেলমন্ত্রী বলেন, আগামী ১ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়াতে ২৯ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুটের দৃষ্টিনন্দন ছয়তলা ভবনের এই রেলস্টেশন। যেখানে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, শিশুযত্ন কেন্দ্র, পোস্ট অফিস, কনভেনশন সেন্টার, ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, প্রার্থনার স্থান, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে শুরু হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজ করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণে খরচ হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা।