প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেছেন, বর্তমানে সংবাদপত্র কর্পোরেটদের হাতে চলে গেছে। সাংবাদিকরা তাদের কথায় চলছে। আগে রাজনীতিবিদরা চালাতো, এখন কর্পোরেটরা গণমাধ্যম চালাচ্ছে। অনেক কোম্পানি আছে যারা গণমাধ্যম চালু করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য কিন্তু সাংবাদিকদের ঠিক মতো বেতন দেয় না। যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
শুক্রবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক আরো বলেন, দেশ নিন্দা মাতৃ নিন্দার মতো পাপ। মায়ের নিন্দা করলে যেমন পাপ হয়। তেমন নিজ দেশের নিন্দা করলে একই পাপ হয়। এ দেশ স্বাধীন করতে এক সাগর রক্ত দিতে হয়েছে। লাখো মায়ের সম্ভ্রম বিলিয়ে দিতে হয়েছে। তাই দেশের জন্য গণমাধ্যমকে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যম পিছিয়ে গেলে দেশ ও জাতি পিছিয়ে পড়বে। তাই সাংবাদিকদের উচিত সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে দেশে স্বার্থে সাহসের সঙ্গে সত্য সংবাদ তুলে আনা।
তিনি আরো বলেন, দেশের স্বার্থ ও সাংবাদিকতা এক ও অভিন্ন। মানুষ সবসময় সঠিক তথ্য চায়। ভুয় নিউজ সমাজকে শেষ করে দেয়। এখন ৫ম শিল্প বিপ্লব চলছে, রোবটিকস যুগ। তাই সাংবাদিকতার ভবিষ্যতে নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে। তথ্য না দিলে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। এ আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে খুবই দরকার পরে। প্রত্যেক সরকারি অফিসে তথ্য কর্মকর্তা রয়েছে। সাংবাদিকদের এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, টিভি বা পত্রিকার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নয়। ফেসবুক, অনলাইনকেও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। অনলাইনে অনেক নিউজ করে থাকে যা একপেশে। তাদের জন্য এ আইন। যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়েছেন তারা অধিকাংশই অনলাইনে লেখার কারণে। আমাদের এখানে সাইবার অপরাধ অনেক বেড়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা কারা করছে তা দেখতে হবে। আইন ভালো না খারাপ তা নির্ভর করে প্রয়োগের ওপর।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জবি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতীতে বঙ্গবন্ধুকে বিপদে ফেলার জন্য অনেক গণমাধ্যম মিথ্যা খবর প্রচার করেছে। এখনো করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেশকে পেছনে ফেলতে চায় তারা। গণমাধ্যমকে সজাগ থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা যারা বিশ্বাস করে না তারা এ দেশকে কিভাবে ভালোবাসতে পারে। বর্তমানে ঘুম থেকে উঠলেই যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার আছে, তখন ভালো লাগে। গণমাধ্যমকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শাহ মো. নিসতার জাহান কবির বলেন, ইত্তেফাকের যৌবনকাল কেমন ছিল, তা এখনকার প্রথম আলো দেখে বুঝা যাবে না। ইত্তেফাকে তখন একটা নাম যাওয়া মানে বিশাল ব্যাপার ছিলো।
আগে সাংবাদিকেরা যে মূল্যবোধ ধারণ করতো, এখন সেটা দেখা যাচ্ছে না। যে অবস্থায় সাংবাদিকতা যাওয়ার কথা, সে অবস্থায় এখনো পৌছায়নি। সাংবাধিকতার সঙ্গে রাজনীতি জড়িত হয়ে শুধু মিডিয়া নয়, সমাজকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা চাই জবি সাংবাদিকতার বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশকে আরো ভালো সাংবাদিকতার উপহার দেবে।
জবি গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের অ্যালামনাইয়ের সভাপতি মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জবি সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাইসুল ইসলাম ও প্রভাষক শেখ আবু রায়হান সিদ্দিকীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।