দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: দেশের বেসরকারি মাধ্যমিক ও কলেজগুলোর কমিটির সভাপতির নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘উচ্চ মাধ্যমিক’ নির্ধারণ করে গেজেট জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশোধন করা হয়েছে বর্তমান গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালাও।
যদিও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে নূন্যতম স্নাতক।
আরো পড়ুন: কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর নাম ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তুরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২৪।
জানা গেছে, এতোদিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর সভাপতি ও সদস্যদের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা ছিলো না। ফলে দেশের অনেক স্থানে স্বশিক্ষিত অনেকেও সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এখন নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গেজেটের কপি দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর হাতে রয়েছে। গেজেটে বলা হয়েছে, একইসঙ্গে এক ব্যক্তি পরপর দু‘বারের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না।
এদিকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে ন্যূনতম স্নাতক পাস হওয়া বাধ্যতামূলক। স্নাতক (পাস) ও অনার্স-মাস্টার্স কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হবার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস নির্ধারণ করা আছে।
অন্যদিকে, হাইকোর্টের এক রায়ে গ্রাজুয়েট ব্যক্তি ছাড়া (ডিগ্রি পাসের নিচে নয়) ফাজিল (স্নাতক) মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না।
কিন্তু বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার জন্য এতোদিন পর্যন্ত কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত ছিলো না। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে একবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিরোধীতায় আটকে যায়।
তার যুক্তি, সংসদ সদস্য হতে হলে কোনো প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে কেনো সনদের প্রসঙ্গ আসবে। দীপু মনি বিষয়টাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও দাবি করেছিলেন কয়েকবার।
এদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক করার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
একাদশ জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘২০২১ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে সংসদীয় কমিটির ১নম্বর সাব-কমিটির প্রতিবেদন পরিচালনা কমিটির সভাপতির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস রাখার সুপারিশ করা হয়। অন্য সদস্যদেরও শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো।’
রাবির সাবেক এই ভিপি আরো বলেন, ‘পরিচালনা কমিটির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক মতানৈক্য তৈরি হয়।’
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি হয় ১১ থেকে ১৪ সদস্যের। এর মধ্যে একজন সভাপতি থাকেন। শিক্ষার্থীর অভিভাবক ছাড়াও সভাপতি হওয়া যায়। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কমিটিও একই রকমের। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠনের অনুমোদন দিয়ে থাকে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৩৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ হাজারে বেশি। বেসরকারি কলেজ ও সমমান প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির না গভর্নিংবডি ও হাইস্কুল সমমানের কমিটি ম্যানেজিং কমিটি নামে পরিচিতি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ, শিক্ষক নিয়োগ (বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বা এনটিআরসিএর সুপারিশে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ হয়। তবে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের পুরো ক্ষমতা কমিটির হাতে), বরখাস্ত, বাতিল বা অপসারণ, নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা ইত্যাদি পরিচালনার কাজ কমিটির হাতে। উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত বাজেটসহ বার্ষিক বাজেট অনুমোদন, সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষিত ও সাধারণ তহবিল, অন্যান্য তহবিল, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বিলে সই করাসহ মোটামুটি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কাজই হয় পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে।
এতোদিন ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের প্রবিধানমালায় চলে আসছিলো বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি। কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ নেই। ফলে যে কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারতেন।
এক সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের চাওয়া অনুযায়ী নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতেন। কিন্তু ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ আদালতের রায়ের পর সংসদ সদস্যরা পদাধিকারবলে সভাপতি হতে পারেন না।
যদিও বাস্তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দের ব্যক্তিরাই পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে থাকেন। সাধারণত স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আত্মীয়স্বজন, ঘনিষ্ঠজন, অনুসারী বা দলীয় নেতা-কর্মীরা পরিচালনা কমিটির বিভিন্ন পদে বসছেন।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।