দৈনিক শিক্ষাডটকম, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় কলেজছাত্র সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিন (১৮) হত্যাকাণ্ডের ৫ দিনের মাথায় ১১ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪-৫ জনকে। গতকাল রোববার রাতে তাহসিনের মা মুড়াউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী-শিক্ষিকা মাহফুজা সুলতানা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের মান্না মিয়া (২০), জুয়েল মিয়া (২১), আনমনু গ্রামের রিহাত মিয়া (২১), রাজাবাদ গ্রামের শাফি মিয়া (২০), গন্ধ্যা গ্রামের রিমন মিয়া (২২), নিজ চৌকি গ্রামের জাকির মিয়া (২০), মাইজগাঁও গ্রামের লাদেন মিয়া (২০), দত্ত গ্রামের সাজু মিয়া (২৫), গন্ধ্যা গ্রামের সাজ্জাত মিয়া (২৪), মিল্লিক গ্রামের রাতুল মিয়া (২৩) ও বানিয়াচং উপজেলার কালাইনজুরা গ্রামের মওদুদ আহমেদ (৪০)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ রাইসুল হক তাহসিন (১৮) নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আসামিদের কয়েকজন নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র। অন্যরা লেখাপড়া করে না। তবে একসঙ্গে চলাফেরা করে। মান্নাসহ অন্যরা তাহসিনকে তাদের সঙ্গে চলতে বললেও চালচলন, কথাবার্তা ও আচরণ উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির দেখে তাহসিন এড়িয়ে চলেন। এ জন্য আসামিরা তাহসিনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
এজাহারে বলা হয়, তাহসিন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে নির্বাচনী পরীক্ষা দেয়ার জন্য কলেজে যান। পরীক্ষার সময় আসামিদের কয়েকজন তাহসিনকে পরীক্ষার খাতা দেখানোর জন্য অনুরোধ করলে রাজি হননি তিনি। পরীক্ষার পর কলেজের সামনে মাঠে মান্না, জুয়েল, রিহাত ও রাতুল পরীক্ষার হলে খাতা না দেখানোয় তাহসিনকে অপমান করে। একপর্যায়ে তারা তাহসিনের মুখে ও শরীরে থুতু নিক্ষেপ করে। তাহসিন প্রতিবাদ করলে মান্নাসহ অন্যদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে কলেজের সিনিয়র ছাত্রদের হস্তক্ষেপে তাহসিন কলেজ ছেড়ে বাসায় চলে আসেন। বিকেলে তাহসিন খালাতো ভাই ও সহপাঠী তাহসিন মাহিকে নিয়ে চা খাওয়ার জন্য নবীগঞ্জ শহরে রাজা কমপ্লেক্সের পেছনে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে যান। তখন মান্নাসহ অন্যরা তাহসিনকে লক্ষ্য করে গালি দেয়। পরে তাহসিনকে মারপিট করার জন্য উদ্যত হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের সরিয়ে দেয়।
পরে তাহসিন মাহিকে নিয়ে বইমেলা দেখার জন্য পৌরসভা প্রাঙ্গণে যান। রাত ৯টায় বইমেলা থেকে ফেরার পথে ওসমানী রোডের হাজারী মার্কেটের সামনে পৌঁছামাত্র মান্নাসহ অন্য আসামিরা দেশীয় ধারালো দা, লাঠি, লোহার রড, পাইপ, চাকু, ছুরি দিয়ে তাহসিন ও মাহির ওপর হামলা করে। এ সময় তাহসিনকে সারা শরীরে আঘাত ও পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাহসিনকে বাঁচাতে গেলে মাহিকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাহসিন ও মাহিকে উদ্ধার করে প্রথমে নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাহসিন মারা যান। পরে বুধবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ জেকে উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাহসিনের গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন, ‘তাহসিনের মা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা মামলা রুজু করে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখছি। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’