কলেজে ভর্তিতে কোটা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ শিক্ষকদের - দৈনিকশিক্ষা

কলেজে ভর্তিতে কোটা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ শিক্ষকদের

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: যারা সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন যুগ যুগ ধরে সেই সরকারি কলেজ শিক্ষকরাই তাদের সন্তানদের ভর্তিতে কোটা সুবিধা পাবেন না। আর এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। নাম না প্রকাশের শর্তে তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ ফেসুবকসহ নানা মাধ্যমে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। সদ্য প্রকাশিত একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর-সংস্থার ২ শতাংশ কোটা নিয়ে তাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, বিগত দিনে এই কোটার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে প্রাপ্য নন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরাও এর সুযোগ নিয়ে রাজধানীর নামিদামি কলেজে অনায়াসে ভর্তি হয়েছে। আগে মন্ত্রণালয় থেকে এই ‘অধীনস্ত দপ্তর ও সংস্থা’র কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা থাকায় কলেজ অধ্যক্ষরাও ভর্তিতে নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবারই প্রথম ২৮টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে এ তালিকা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। কারণ তালিকার প্রথমেই রয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের নাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় সংসদে পাস হওয়া পৃথক আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এসব প্রতিষ্ঠান স্বায়ত্তশাসিত। কোনোভাবেই এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থা নয়। একইভাবে এ তালিকার ৬ নম্বরে থাকা ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ১১ নম্বরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটও পৃথক আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। তালিকায় সর্বশেষ স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার)। ট্রাস্ট বা মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান। তবে এগুলো সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অধীনস্ত দপ্তর বা সংস্থার মধ্যে পড়ে না। এ তালিকায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের নাম রয়েছে। আইন অনুসারে, প্রতিটি শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্তশাসিত। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তারা বলছেন, যতই স্বায়ত্ত্বশাসিত হোক আসলে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্তই। 

গত ১৫ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা-২০২৪’  প্রকাশ করা হয়। নীতিমালা অনুসারে, একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের ৯৩ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যা মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত হবে।

এবার কলেজ ভর্তিতে দুটি ক্ষেত্রে কোটা রাখা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর বা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত। তবে এসব আসনে কোটার শিক্ষার্থী না থাকলে সেখানে মেধার মাধ্যমে ভর্তি করার কথা।

গত বছরের ভর্তি নীতিমালার সঙ্গে তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রথম দফায় সংজ্ঞা নীতিমালায় উপনীতি যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে ‘দপ্তর সংস্থা’ বলতে তপশিল ঘ-এর একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালায় ছিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর বা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।

এবার ২ শতাংশ সংরক্ষিত আসনের ১ ভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তান এবং আরেক ভাগ অধীনস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানের জন্য রাখা হয়েছে।
এ বছর ভর্তি কোটার আসন এভাবে পুনর্বিন্যাসের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান  অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এবার এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ মন্ত্রণালয় ভালো জানবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ অনুবিভাগ) সৈয়দা নওয়ারা জাহান এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

কোটায় ভর্তিতে মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর, সংস্থার সংজ্ঞায় না পড়লেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম এবার এই ২৮ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রাখা হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সন্তানরাও অনায়াসে কোটার সুযোগ পাবে। অথচ সরকারি ও বেসরকারি নামিদামি যেসব কলেজে ভর্তির জন্য এত তোড়জোড়, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাই নিজের সন্তানের ভর্তির জন্য কোটা পাবেন না।

একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সরকারি কলেজে কর্মরত সহকর্মীদের কোনো অবস্থান নাই, এই বৈষম্য বঞ্চনা দিন দিন প্রকট হবে কিছু তৈলবাজ, চাটুকার শ্রেণির জন্য এইসব চাটুকার শ্রেণি নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য সামষ্টিক স্বার্থের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। ’

আবদুল মান্নান নামের একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা লিখেছেন, এবার বুঝলেন ক্যাডার কর্মকর্তা কাকে বলে।  

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর/অফিসের অফিসারদের সন্তানরা ২% কোটায় সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারবে। অথচ যারা পড়ায় বা কাজ করেন, সরকারি কলেজের শিক্ষক/কর্মচারী, তাদের সন্তানরা এ সুযোগ পাবে না। এটি প্রহসন নয় কি?’

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ খন্দকার বলেন, উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোতে যারা পড়ান আর যারা কর্মচারী, তাদের সন্তানদের কোটা সুবিধা দেওয়া। ধরুন, আমি ঢাকা কলেজে পড়াচ্ছি। অথচ আমার সন্তানই ভর্তিতে এ সুবিধা পাবে না। এটা কি হয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তো তাদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পান। সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক ও সুবিবেচিত হয়নি। এর সংশোধন দরকার। 

জানা গেছে, আগামী ২৬ মে থেকে অনলাইনে কলেজে একাদশ শ্রেণির ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে, শেষ হবে ১১ জুন। এবার পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী।  শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে ২৫ লাখ। ফলে এসএসসি পাস সবাই কলেজে ভর্তি হলেও ৮ লাখের বেশি আসন খালি থেকে যাবে। 

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068130493164062