দৈনিক শিক্ষাডটকম, যশোর: সেবাগ্রহীতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিতে জরুরি কোনো কাজে গেলে দিনের পর দিন ঘুরেও মিলছে না সেবা। বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, জনবলের চরম সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর বোর্ড চেয়ারম্যান বলছেন, জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে বারবার চিঠি দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
খুলনার দৌলতপুরের বাসিন্দা শিলা রানী তার নিজের ও বোনের সনদপত্রে বাবার নামের বানান ভুল সংশোধন করতে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে যশোর শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেছিলেন। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই গত দুইদিন ধরে বোর্ড কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে ঘুরে ফিরছেন। শুধু শিলা নয়, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৬টি বিভাগের ২২টি শাখার সেবাপ্রত্যাশী সবার একই দশা। যে কারণে সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই অপেক্ষায় থাকতে হয়। অনেকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েও পড়েন।
শিলা রানী বলেন, আমরা কেউ শিক্ষার্থী, কেউ চাকরিজীবী। একটি কাজের জন্য বারবার আসা সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি ভোগান্তি হয়। বোর্ডের লোকবল বাড়িয়ে এ ভোগান্তি শেষ করা উচিত।
শাহরিয়ার আলম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ফেব্রুয়ারিতে সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করেছি। আজ ৯ মে কাজটি এখনও শেষ হয়নি। আগামী ২০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সনদপত্রটি প্রয়োজন। কী করব বুঝতে পারছি না।’
খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কাজ শুরু করে যশোর শিক্ষাবোর্ড। শুরুতে জনবল ছিল ৩৫৯ জন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চালু হওয়ার পর এর জনবল কমে দাঁড়ায় ২৫৩ জনে। যার মধ্যে অবসরজনিত কারণে ১৪৬টি পদ শূন্য হয়ে গেছে। কিন্তু প্রায় এক যুগ বোর্ডে শূন্য পদের বিপরীতে কোনো নিয়োগ হয়নি। এ জন্য স্থবির হয়ে পড়েছে বোর্ডের কাজকর্ম। অধিকাংশ সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ার টেবিল ফাঁকা পড়ে আছে। আর যারা কাজ করছেন, দিন-রাত মিলে তিনজনের কাজ একজন করতে শারীরিক ও মানসিক চাপে ভুগছেন। এমনকি লোকবল সংকট কাটাতে গিয়ে সাময়িক জনবল নিয়োগের ফলে বোর্ডের গোপনীয়তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
বোর্ডের কর্মচারী আব্দুল মান্নান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বোর্ডে নিয়োগ হয় না। প্রতিনিয়ত কর্মরতরা অবসরে যাচ্ছে। ফলে এখন একজনকে তিনজনের কাজ করতে হয়। এ কারণে সময়মত সব সেবা দেয়া সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ‘কাজের জন্য আমরা শারীরিক ও মানসিক চাপে থাকি। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। তিন বছর ধরে সিএল ছুটিও নিতে পারিনি। এর মধ্য দিয়েই সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা কর যাচ্ছি।’
বোর্ডের সচিব প্রফেসর মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘জনবল সংকটে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে, বলা চলে রাতদিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে সবাইকে। কাজের প্রয়োজনে মাস্টাররোলে লোক নেয়া হচ্ছে। এতে বোর্ডের গোপনীয়তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাছাড়া দক্ষ জনবলও তৈরি হচ্ছে না। এজন্য শুধু জনবল নিয়োগ দিলে হবে না, যুগোপযোগী চলার জন্যে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিও আনতে হবে।’
এ বিষয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবীব বলেন, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। জনবল সংকটের বিষয়টি শিক্ষা সচিবের কাছে একাধিকবার উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার মিলছে না। তারপরও সরকার এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশাবাদী।’
বোর্ডের তথ্যমতে, প্রথম শ্রেণির ২৫টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে একটি, দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩টি পদের মধ্যে শূন্য ৪টি, তৃতীয় শ্রেণির ১২২টি পদের মধ্যে ৮২টি এবং ৪র্থ শ্রেণির ৮৩টি পদের ৫৫টি পদ শূন্য রয়েছে।