কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক সংকট দূর করা জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক সংকট দূর করা জরুরি

লিজা আক্তার |

‘শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো। সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’। এ লাইন দুটি বাস্তবায়নে যারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তারা হলেন শিক্ষক। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সংকট থাকায় প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন। 

লিজা আক্তার

বর্তমানে আমাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের অবস্থা নিরসন না করে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব না। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কারিকুলাম বাস্তবায়নের প্রথম বছরটি শেষ হওয়ার পথে। নতুন কারিকুলামের শিক্ষা আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতোটুকু পৌঁছাতে পেরেছি তা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বোঝা যাবে। এমন অনেক বিষয় আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা পুরো বই সম্পর্কে ধারণা পায়নি। প্রত্যেকটি বিষয়েই শিক্ষার্থীর জন্য অনেক কাজ করার আছে একটি বা দুটি কাজের মধ্যে কিন্তু তা সীমাবদ্ধ নয়।

শিক্ষার্থীরা যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জন করতে না পারে তাহলে আমাদের এই নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য সফল হবে না। তাই শিক্ষক ঘাটতি কমিয়ে, মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করে আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। কারণ, একটি বছরে যে শিক্ষার্থীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা অর্জন থেকে বঞ্চিত হলেন তার দায়ভার কে গ্রহণ করবে? এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যদি কারিকুলাম বুঝতে ৩-৪ বছর চলে যায়, তাহলে কীভাবে আমরা একটি স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। তাই শিক্ষা প্রশাসনের কাছে নিবেদন শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমলে নিয়ে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেন এবং সেই সঙ্গে নতুন শিক্ষকদেরকেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করুন।

মাধ্যমিক স্তরের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (প্রায় ৭০ শতাংশ)। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের কাজটি করে থাকেন এনটিআরসিএ। এ পর্যন্ত তিনটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এনটিআরসিএ প্রায় ১ লক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। এটি বর্তমান সরকার এবং এনটিআরসিএ এর একটি বড় সফলতা। বর্তমানে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষককে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে রেখেছে। প্রায় অনেক বছর ধরে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আটকে আছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ যেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রায় ৮০ হাজার পদ শূন্য সেখানে ২৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের পরও এই সংকট থেকেই যাবে।

তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, অন্ততপক্ষে যারা প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকেও যদি আমরা নতুন বছরের আগে যোগদান করিয়ে এবং সেই সঙ্গে নতুন কারিকুলামের ওপর তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করা যায়। তাহলে তা আমাদের নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়া। আর প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষক সংকট থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথটি রুদ্ধ হয়ে থাকবে।

আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাতটিও লক্ষণীয় বিষয়। এমন অনেক বিদ্যালয় আছে যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৭০, ১:৮০, ১:৬০, ১:৯০, ১:১০০। আর এই যদি হয় চিত্র তাহলে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব তা বিবেচনার বিষয়। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এর মধ্যে নির্দেশনা এসেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৪০ রাখতে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নেও কিন্তু জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি যেটা বোঝা যায় তা হলো, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট দূর করা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষামন্ত্রণালয় এ বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এই প্রত্যাশা রইল।

লেখক : লিজা আক্তার, সহকারী শিক্ষক, খিলা উচ্চ বিদ্যালয়, আটপাড়া, নেত্রকোনা

 

‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041129589080811