কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়ার শর্তে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাবর্ষ বা সেমিস্টারে অনুষ্ঠিত মোট ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকলে উপবৃত্তি পাবেন। তবে আগের শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে গড়ে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। এই শর্তগুলো আগে ছিলো ৮০ শতাংশ উপস্থিতি ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করা।
সম্প্রতি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি বিতরণ ও শিক্ষা উপকরণ ক্রয় সহায়তা দেয়ার নির্দেশিকা- ২০২৩ প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, প্রতি ৬ মাস পর-পর এই উপবৃত্তির টাকা বণ্টন করা হবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ১ বছর পরও উপবৃত্তির টাকা বণ্টন করা যাবে।
জানা যায়, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় উৎসাহিত করে কারিগরি শিক্ষার হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার হার হ্রাস, উন্নয়ন কাজে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং উপবৃত্তি কার্যক্রমে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি (বিএমটি) অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশে এর আগে জারি করা নীতিমালা-২০২০ বাতিল করা হয়েছে। পরে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি বিতরণ ও শিক্ষা উপকরণ ক্রয় সহায়তা প্রদান নির্দেশিকা- ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। এই নির্দেশিকায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়ার শর্তে কিছু শিথিলতা আনা হয়েছে।
এতে উপবৃত্তি পাওয়ার সাধারণ শর্তাবলী অংশে বলা হয়েছে, নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে সফটওয়্যারে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। শিক্ষাবর্ষ-সেমিস্টারে অনুষ্ঠিত মোট ক্লাসের শতকরা ৭০ ভাগ ক্লাসে শিক্ষার্থীকে উপস্থিত থাকতে হবে। শিক্ষার্থীকে আগের বছরের চূড়ান্ত পরীক্ষায় গড়ে ৪০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সব বিষয়ে পাস করতে হবে। নতুন ভর্তি শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সর্বশেষ পরীক্ষা-পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করতে হবে। অভিভাবকের বার্ষিক আয় অনধিক ৩০ হাজার টাকা হতে হবে।
এ ছাড়াও সরকারি অন্য কোনো উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী এ নির্দেশিকার আওতায় উপবৃত্তি পাবেন না।
এ ছাড়াও নির্দেশিকায় কোন শ্রেণির শিক্ষার্থী কেমন হারে উপবৃত্তি পাবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এইচএসসি ভোকেশনাল ও এইচএসসি বিএমটি শিক্ষার্থীরা মাসিক ৫০০ টাকা হারে এই উপবৃত্তি পাবেন।
মাধ্যমিক পর্যায়ে এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল কোর্সের শিক্ষার্থীরা পাবেন মাসিক ৩৫০ টাকা হারে। ৮ম প্রি-ভোকেশনাল শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মাসিক ২৮৫ টাকা হারে পাবেন। ৬ষ্ঠ ও ৭ম প্রি-ভোকেশনাল শ্রেণির শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির হার মাসিক ২৩৫ টাকা।
এ ছাড়াও শিক্ষা উপকরণ ক্রয় সহায়তা বাবদ এইচএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসি বিএমটি কোর্সের শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক ১ হাজার টাকা প্রতি ৬ মাসে ৫০০ টাকা হারে এবং চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীর প্রতি সেমিস্টারে ১ হাজার টাকা।
এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল কোর্সের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণির বোর্ড সমাপনী পরীক্ষার ফর্ম পূরণ বাবদ ১ হাজার টাকা এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল সমাপনী পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এইচএসসি ভোকেশনাল ও এইচএসসি বিএমটি কোর্সের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণির বোর্ড সমাপনী পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ১ হাজার টাকা, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এইচএসসি ভোকেশনাল ও এইচএসসি বিএমটি সমাপনী পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ১ হাজার এবং চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বাবদ প্রতি সেমিস্টারে ১ হাজার টাকা হারে বছরে ২ হাজার টাকা পাবেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন হাজার ৭৫৫টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ছয় লাখ ৪১ হাজার ৩০০ জন কারিগরি শিক্ষার্থীকে ১৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ জন শিক্ষার্থীকে ২৮২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮২ জন শিক্ষার্থীকে ৪২৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।