ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় সারাদেশে গতিহীন হয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যসেবা আগামীকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে স্বাভাবিক সূচিতে ফিরবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এই তথ্য জানান হাসপাতালের রেসিডেন্ট চিকিৎসক আব্দুল আহাদ।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, দুই দিন পর আজ ১০টা থেকে ঢাকা মেডিক্যালের বহির্বিভাগ সেবা চালু হয়েছে। এর আগে, সকাল ৮টা থেকে দুই ঘণ্টা চলে চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি। এরপর চিকিৎসকেরা বহির্বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে কাজে যোগ দেন। এতে স্বাভাবিক সময়ের মতো সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। টিকিটের জন্য দেখা গেছে দীর্ঘ সারি।
রোগী মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে ঢামেক হাসপাতালে শনিবার (৩১ আগস্ট) চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করেন ঢামেকসহ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। হামলাকারীদের গ্রেফতার-বিচার, নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন।
একই দিন দুপুর দুইটার দিকে হাসপাতালের বাগান গেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢামেকের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. আব্দুল আহাদ আন্দোলনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
একই সঙ্গে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের সুরক্ষসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। এগুলো হলো—
১. অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার ও দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. চিকিৎসকদের সুরক্ষায় ঢাকা মেডিক্যালসহ সকল উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় সদর ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা সেনা মোতায়েন নিশ্চিত করতে হবে। আর তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩. ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা প্রদানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টসহ আইন প্রণেতাদের সাত দিন সময় বেধে দেওয়া হবে এবং
৪. কার্যকর ও সময়োপযোগী স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন দ্রুত প্রণয়ন এবং সংস্কার করে এর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে ফেরেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে মোটরসাইকেলে গুরুতর আহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলামের (২৫) চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে শনিবার চিকিৎসকদের মারধর করা হয়। মারধরের ঘটনায় শনিবার বিকেল থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের ওই শিক্ষার্থী বন্ধুকে বিমানবন্দরে নামিয়ে দিয়ে মিরপুরে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শনিবার তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদিন সকালে তিনি মারা যান।
এর কয়েক ঘণ্টা পর রাতে একই হাসপাতালে সন্ত্রাসীরা ঢুকে একজন রোগীকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা চিকিৎসকদেরও মারধর করে।