বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে কমবেশি সবাই কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত আছেন। কিউএস র্যাঙ্কিং হলো কোয়াকোয়ারেলি সাইমন্ডস দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ের একটি বার্ষিক প্রকাশনা। এটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। কিউএস সিস্টেমে তিনটি অংশ রয়েছে-বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক র্যাঙ্কিং, বিষয়ের র্যাঙ্কিং, যা ৫১টি ভিন্ন বিষয় এবং পাঁচটি যৌগিক অনুষদ এলাকার অধ্যয়েনের জন্য বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ করা হয়, সেইসঙ্গে এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, উদীয়মান পাঁচটি স্বাধীন আঞ্চলিক টেবিল।
কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং বার্ষিকভাবে সাধারণত জুন মাসে প্রকাশিত হয়। ২০২৩ সংস্করণে ১০০টি স্থানের মধ্যে ১৪১৮ প্রতিষ্ঠানে র্যাঙ্কিং হয়েছে। র্যাঙ্কিংগুলো এমন একটি পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যা একাডেমিক খ্যাতি, নিয়োগ কর্তার খ্যাতি, গবেষণার গভীরতা এবং আন্তর্জাতিকীকরণসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে। পদ্ধতিটি প্রাসঙ্গিক এবং যাতে আপ-টু-ডেট থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য বার্ষিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়।
বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিং মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান কিউএস গত ৯ এপ্রিল তাদের ওয়েবসাইটে র্যাঙ্কিংয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে। ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৪: টপ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’ শীর্ষক র্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৫০০-এর পরে থাকা বিম্ববিদ্যালয়গুলোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রকাশ করা হয় না। এ কারণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়র অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে কতো নম্বরে তা উল্লেখ করেনি সংস্থাটি। তবে, কিউএস র্যাঙ্কিং ২০২৪ প্রকাশিত এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৪০তম এবং বুয়েটের অবস্থান ১৮৭তম। আর নর্থ সাউথ ও ব্র্যাকের অবস্থান যথাক্রমে ১৯১তম এবং ২৯০তম। আর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে ১৯তম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকার প্রথমদিকে স্থান করে নিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ২৯তম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ৩২তম ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ৬৩তম অবস্থানে আছে। এর মধ্যে দ্য ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি বোম্বে (আইআইটিবি) তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ্বের ৯৫টি দেশের মোট এক হাজার ৫৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৬ হাজার ৪০০টিরও বেশি একাডেমিক প্রোগ্রামের মর্যাদা ও গবেষণাকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র্যাঙ্কিংয়ে স্থান দেয়া হয়েছে। সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ক্যাটাগরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪৫১-৫০০ এর মধ্যে। আর আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ ক্যাটাগরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৫০১-৫৫০ এর মধ্যে। অন্যান্য ক্যাটাগরিগুলো হলো-লাইফ সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন, ন্যচারাল সায়েন্স। এই দুই ক্যাটাগরিতে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয়নি। এদিকে, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরা ৩ বিশ্ববিদ্যালয় হলো-এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ।
এবারের তালিকায় বিশ্বসেরা ৭০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়েরও একটা অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় টানা ষষ্ঠ বার কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ৮০১-এর পরে আবস্থানে আছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে এই র্যাঙ্কিংয়ে ৮০১ থেকে ১০০০তম অবস্থান ছিলো বুয়েটের, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮০১-৮৫০ এর মধ্যে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, তালিকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দেশসেরা হয়েছে বেসরককারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। এটির অবস্থান ৮৫১ থেকে ৯০০-এর মধ্যো।
এ ছাড়া এবারের তালিকায় ১০০০-এর মধ্যে আছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। গতবারের র্যাঙ্কিংয়ে এ দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ই ১০০০-এর বাইরে ছিলো। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্টরন্যাশনাল ইউনিভার্সিট অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ।
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের র্যাঙ্কিং প্রধানত ১১টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা, উদ্ভাবন, চাকরিতে স্নাতকদের কর্মদক্ষতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাফল্য, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুপাত বিবেচনা করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ের বিষয়টি কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকটি ক্রাইটেরিয়াকে ভিত্তি করে বিশ্বের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বলে আখ্যায়িত করাই নয়। আমরা ওপরে দেখলাম বিষয়ভিত্তিক র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক ধরনের অবস্থান থাকে। লোকাল র্যাঙ্কিংয়ে সেটি আবার মহাদেশ ও অঞ্চল ভিত্তিক। আর সার্বিক র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। সার্বিক র্যাঙ্কিংয়ে বহু বছর যাবত ৩০০০-এর পরে ছিলো আমাদের দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে, এটি এখন আস্তে আস্তে কাছে চলে এসেছে এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আমরা গ্লোবাল র্যাঙ্কিংয়ে স্থান করে নিতে পারবো। সেজন্য আমাদের গবেষণার মান বাড়াতে হবে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে হবে, গ্লোবাল মার্কেটে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের কার্যকরী অংশগ্রহণের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাম্পাসগুলোতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক: লিড এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ টিম, দৈনিক শিক্ষাডটক