আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। সাধারণত প্রাথমিক শিক্ষার স্তরকে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ধরা হয়। হালে যুক্ত হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক, যেটা অনেক আগে শিশু শ্রেণি নামে ছিলো। দেশের গ্রামগঞ্জ, শহর-নগর সবখানেই প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। দেশের প্রায় দেড়কোটি ছাত্রছাত্রী এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া করেন। তারপরও দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে গ্রামগঞ্জে ও শহরে। দেশের প্রয়োজনে, শিক্ষার প্রয়োজনে চাহিদা আছে বলেই দেশের নানা স্থানে এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। লাখ লাখ শিশুশিক্ষার্থী এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুলে লেখাপড়া করেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বেশিরভাগই প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। গত কয়েক বছর ধরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়া হয়। সরকারি বইয়ের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের বয়স অনুপাতে গণিত, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞানের কিছু বই কিন্ডারগার্টেন গার্ডেন স্কুলে পড়ানো হয়। শহরাঞ্চলে স্বনামধন্য কিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুলে একটু বেশি বেতন নেয়া হলেও গ্রাম অঞ্চলে কিন্ডারগার্টেনে যৎসামান্য বেতনে পড়ানো হয়।
আমার জানা মতে দেশে হাজার হাজার শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে লেখাপড়া করেন আর এসব প্রতিষ্ঠান প্রাইভেটলি পরিচালিত হয়। প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক আনন্দঘন পরিবেশে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্রদের পাঠদান করে থাকেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থেকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও রয়েছে। তাই এগুলোতে তারা সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে নেই।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কেব সরকারিভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিশুদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ এমনকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের যে উপবৃত্তি দেয়া হয়, কিন্ডারগার্টেনের শিশুদেরকে কিন্তু সে উপবৃত্তি দেয়া হয় না। আমি মনে করি, একটি শিশু যখন বিদ্যালয় যাবার বয়সে উপনীত হন, তখন কি শিশু কোন বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিজে নেন? নাকি ভর্তিচ্ছু শিশুর বাবা-মা নিয়ে থাকেন? আমরা সচরাচর যেটা দেখি, বাচ্চা কোন স্কুলে ভর্তি হবেন এ সিদ্ধান্ত বাবা-মা নিয়ে থাকেন। তাহলে যে সব শিশু কিন্টারগার্টেন স্কুলে লেখাপড়া করেন, সে সব শিশুকে কেনো রাষ্ট্রপ্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাসহ উপবৃত্তি খেলাধুলার সামগ্রী, সুন্দরভাবে পাঠদান করবার জন্য অবকাঠামো সুবিধা দেয়া হয় না? সরকারিভাবে কোনো কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চেয়ার টেবিল আসবাবপত্র প্রদান করা হয় না। বিদ্যালয় পরিচালনার স্বার্থে উদ্যোক্তারাই সেটা করে থাকেন।
বাংলাদেশে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত সরকারি অথবা এমপিওভুক্ত হয়নি এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো বা সুযোগ সরকারিভাবে ভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হয়। আমরা দেশের ডিপ্লোমা লেখাপড়ার সম্পর্কে জানি। সরকারি এবং বেসরকারি সব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কিন্তু উপবৃত্তি দেয়া হয়।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করতে হলে সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের দেয়া দরকার। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া গেলে আরো বেশি, বিশেষ করে, চরাঞ্চলের, হাওর অঞ্চলের, উপকূলীয় এলাকায় যে সব মানুষ এখনো পর্যন্ত অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল সে সব পরিবারের ছেলেমেয়েরা আরো বেশি স্কুলমুখী হবেন। প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া রোধ অনেকাংশে কমে যাবে বলেও আমি মনে করি।
বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা তালা এবং পাইকগাছা। এই দুই উপজেলায় দশটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের ছাত্রছাত্রীদের সরকারি সুযোগ-সুবিধার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়। আদালত তালা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের করা রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আদালত বলেছে, যদি বিশেষ কোনো অসুবিধা না থাকে তাহলে দুই মাসের মধ্যে রিটে অংশগ্রহণকারী কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি সুযোগ দেয়া হোক।
আমার মনে হয় আদালতের এই রায় দ্রুত বাস্তবায়ন হলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবেন। কারণ, কিন্ডারগার্টেনের এই শিশুরাও তো এই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। তালার কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা জানান, তারা দীর্ঘদিন, বিশেষ করে তালা এবং পাইকগাছা উপজেলার কিন্ডারগার্টেনে অধ্যয়নরত প্রতিষ্ঠানের শিশুদের সুযোগ-সুবিধার জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সুবিধা পেলে উপকূলীয় এলাকায় প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়া অনেক কম হবে।
সমগ্র দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের জন্য সরকারিভাবে যে বিধিমালা করা হয়েছে, এই বিধিমালার আলোকে যে সব কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ছাত্রছাত্রী রয়েছেন, অবকাঠামো রয়েছে তাদেরকে সরকারি বিদ্যালয়ের মতো সুযোগ-সুবিধা দেয়া যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং সম্মানী-ভাতা দিলে শিক্ষার্থীদের থেকে অনেক বেশি টিউশন ফি আদায় করার মানসিকতা থেকে কিন্ডারগার্টেন স্কুল কর্তৃপক্ষ সরে আসবে। আর সেক্ষেত্রে সরকার শতভাগ শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করার যে প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে তার সফল বাস্তবায়ন হবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: অধ্যক্ষ, সুন্দরবন পিটিডি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কপিলমুনি, খুলনা
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।