আগামী আট থেকে এগারোই জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বেইজিং যাচ্ছেন। ভারত সফরের পরপরই দ্বিপাক্ষিক চীন সফরটিকে ভূরাজনৈতিক অবস্থান আর অর্থনৈতিক সংকটের বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্যে বেশ 'তাৎপর্যপূর্ণ' হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা কিংবা কতগুলি চুক্তি-সমঝোতা হবে সেটি জানায়নি। তবে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য এই সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এক কথায় জানান, চীন সফরে অগ্রাধিকার হবে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন।’
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বহুমাত্রিক। একক দেশ হিসেবে চীনের কাছ থেকেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে এবং গত কয়েক বছর ধরে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও চীন বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলার ক্লাবের সদস্য।
অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী আসন্ন চীন সফরে বেশকিছু বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নানান মাত্রা আছে। চীনে আমাদের অনেক ছাত্ররা যান। সুতরাং শিক্ষা, অবকাঠামো কালচারাল এক্সচেঞ্জ, আমাদের বাণিজ্য বিনিয়োগ সুবিধা এইসব বহুমাত্রিক একটা আলোচনা হবে বলে মনে হচ্ছে।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের পর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক কৌশলগত সহযোগিতার স্তরে উন্নীত হয়। এবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে ঢাকা-বেইজিং দ্বীপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন কী মাত্রা যুক্ত হয় এবং চীনের বৈশ্বিক রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশ কীভাবে কতটা যুক্ত হয়, সেদিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের।
ভারত সফরের পর আসন্ন চীন সফরে তিস্তা প্রকল্প, রোহিঙ্গা সমস্যা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য চীনের ঋণ নেবার বিষয়টি আলোচিত হবে বলেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, চীনের কাছে টাকা আছে যেটি বাংলাদেশের দরকার। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি বিশেষ করে রাজনৈতিক দিক থেকে চীনকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে বাংলাদের অবস্থান কী সেটি তুলে ধরা হতে পারে। এছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে যেহেতু চীনের সম্পর্ক ভালো তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতা বাংলাদেশ চাইবে।
বাংলাদেশ চীনের কাছে কূটনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে আশ্বস্ত করবে বলেও মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমরা এই এলাকায় কোনো ডিফেন্স প্যাক্ট পছন্দ করি না, আমরা চাই উন্নয়ন। চীনের অধিকাংশ বাণিজ্য হয় ভারত মহাসাগর দিয়ে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ মনে করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল হবে সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং সেটি এই অঞ্চলের সবগুলো দেশের উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের ভিত্তিতে হবে। আমরা কোনো দেশকে আটকাতে চাই না। অন্যান্যরা চায় যে কোনো একটা দেশের মূলত চায়নাকে কনটেন্ট করা, আমরা সে লাইনে না। সূত্র: বিবিসি