দৈনিক শিক্ষাডটকম, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) : নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯২ প্রধান শিক্ষকসহ ১৩০ শিক্ষকের পদ শুন্য। ফলে স্থবিরতা বিরাজ করছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে।
জানা যায়, উপজেলায় ১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯২টি বিদ্যালয়ে পূর্ণ মর্যাদার প্রধান শিক্ষক নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিসে ১৩টি পদের মধ্যে ৭টি পদই শূন্য। কেবলমাত্র ১ জন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, দুইজন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ১ জন ইডিএ, একজন অফিস সহকারী ও একজন হিসাব সহকারী কোনোভাবে চালাচ্ছেন অফিস। এতে করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদানসহ অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম।
উপজেলার ৯২ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্বে থেকে একইসঙ্গে দুই দায়িত্ব পালন করছেন। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদেরও। অন্যদিকে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে পড়ছে।
শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হলে শিগগিরই শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করা দরকার মনে করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে, কেন্দুয়া উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিকে ৯২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। ৫২টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাজ চালানো হচ্ছে আর ৪০টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ৩৮ সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। সহকারী শিক্ষা অফিসারের সংকট থাকায় ৭টি ক্লাস্টারের কার্যক্রম ও ব্যাহত হচ্ছে।
কেন্দুয়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জহুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জামিরুল হক জানান, উপজেলার ৯৩টি প্রধান শিক্ষকসহ ১৩০ শিক্ষকের পদ শূন্যসহ শিক্ষা অফিসের সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সহ ৭টি পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান ও অফিসের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিগগিরই এসব পদ পূরণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
কেন্দুয়া পৌরসভার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাকী বলেন, গত বছর স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলামের অবসরের পর থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। সহকারী শিক্ষক পদ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় এখন তার স্কুল কার্যক্রমে অনেক চাপ বেড়ে গেছে।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা ৫ সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ৯২ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ১৩০ শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তা ছাড়া অফিসেও ৭টি পদ খালি আছে। এভাবে চললে শিক্ষার গুণগতমান ক্ষুণ্ন হবে। দ্রুত এ শূন্যপদগুলো পূরণ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। আমি এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কেন্দুয়া উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর্জা মোহাম্মদ জানান, উপজেলার ১৮২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯২টিতে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকের ৩৮ পদ শূন্য। অফিসে ১৩টি পদের মধ্যে ৫ জন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সহ ৭টি পদই শূন্য। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। তারপরও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সম্মিলিত নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
স্টাফ ও শিক্ষক সংকটে প্রশাসনিক সহ সকল কার্যক্রমে ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, পদোন্নতির মাধ্যমে ৬৫ শতাংশ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নেই তার তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আর শিক্ষক পদোন্নতির নিয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি।