কেমন আছেন দেশের প্রথম অর্থ সচিব - দৈনিকশিক্ষা

কেমন আছেন দেশের প্রথম অর্থ সচিব

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থ সচিব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মতিউল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন যে ক’জন আমলা, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর হাতে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে। কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউনিডো এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে।

দীর্ঘসময় কাজ করেছেন বিভিন্ন নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিসহ অগণিত প্রতিষ্ঠানে। দেশের অবকাঠামো ও শিল্প খাতে বিনিয়োগ এবং অর্থায়নের জন্য নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন দেশের প্রথম সারির নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (আইআইডিএফসি)। ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। হঠাৎ করেই গত বছর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বর্ষীয়ান এই অর্থনীতির কারিগরকে।

পর্ষদের সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই প্রতিষ্ঠাতাকে। নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে তাকে বানানো হয়েছে ভিলেন। এমনকি তাঁর অনুসারীদেরও ছেঁটে ফেলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি থেকে। মতিউল ইসলামের এখন সময় কাটে পড়াশোনা এবং বই লিখে। সম্প্রতি গুলশানের নিজ বাসায় আলাপচারিতায় তুলে ধরেন তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের কথা। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থার জন্য কিছুটা আক্ষেপও প্রকাশ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বিশ^স্ত এই সহচর।

 ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে লাহোর একাডেমিতে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি) অফিসার হিসেবে যোগ দেন মতিউল ইসলাম। ১৯৫৭-৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন যে ক’জন আমলা, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম।

তিনি শুধু পাকিস্তান সরকারের চাকরিই ছেড়ে দেননি, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন, বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। আলাপচারিতায় মতিউল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরার পর আমার ওপর আস্থা রেখে একটি  যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করতে আমাকে অর্থ সচিব করেছিলেন। শূন্য থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি শক্ত অবস্থানে। বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদের সঠিক পরিকল্পনায় অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।’

মতিউল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭২-এর সেপ্টেম্বরে আমরা যখন ওয়াশিংটনে গেলাম আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তখন ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, একই বছর জানুয়ারিতে তা ছিল শূন্য। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াশিংটন থেকে থেকে আমার ডাক পড়ল। যোগ দিতে হবে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে। বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদ কেউ প্রথমে রাজি হলেন না। পরে দ্রুত ফিরে আসার শর্তে রাজি হলেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকেই জানলাম, ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার কথা। চাকরি শেষে দেশে ফিরলাম ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে আইআইডিএফসি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল দেশের অবকাঠামো ও শিল্প খাতে বিনিয়োগ ও অর্থায়নে যাতে আমরা অংশীদার হতে পারি। সে লক্ষ্যে কাজ করেছে আইআইডিএফসি। বাংলাদেশ ব্যাংক একবার সিদ্ধান্ত নিল যারা দীর্ঘ ৯ বছর চেয়ারম্যানের পদে থাকবে তারা আর পদে থাকতে পারবে না। এরপর বোর্ড আমাকে বিষয়টি জানায়। পর্ষদের সিদ্ধান্তে আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।’

জানা গেছে, তাকে অব্যাহতি দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাঁর প্রিয় সহকর্মীদের। নানা অভিযোগ এনে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাকরিচ্যুত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অপরাধ একটাই যে আমরা আগের চেয়ারম্যানকে পছন্দ করতাম, তাকে শ্রদ্ধা করতাম। তিনিও আমাদের স্নেহ করতেন। মূলত এই কারণেই আমাদের অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছে। আমাদের এই চাকরিচ্যুতির পেছনে কোনো একটা চক্র কাজ করেছে বলে মনে হয়।

এখন অভিজ্ঞতাহীন লোকদের ওখানে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পছন্দের লোকদের বসানো হয়েছে কয়েক ধাপ ওপরে এনে। এদের কেউ কেউ বর্তমান কর্তৃপক্ষের আত্মীয় পরিচয়ে দাপট দেখাচ্ছেন, সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার  করছেন। নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য যা খুশি তাই করছেন।’ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মতিউল ইসলাম অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আপনারাই খুঁজে দেখুন ওখানে কি হচ্ছে।’

পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034561157226562