সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধাতি বাতিলের দাবিতে গত রোববার থেকে সারা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালগুলোতে সব ধরনর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। কোটা আন্দোলনকারীদের এ ঘোষণার দুদিন আগ থেকেই যেনো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের হিড়িক পড়ে গিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ব্যাচ থেকে একে একে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা আসতে শুরু করে। এ বর্জন কর্মসূচিতে প্রথম নাম আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচ ‘পনেরোপলিস’। পরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচ ‘এনলাইটেন্ড’সহ প্রায় সকল বিভাগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪টি বিভাগ ও ১৩টি ইনস্টিটিউটের প্রতিটি বিভাগে ৫টি করে ব্যাচ চলমান রয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে বিভাগ ও ইন্সটিটিউট মিলে ক্লাস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে সংহতি জানানোর সংখ্যা ৬৩টি। অধিকাংশ বিভাগের সব ব্যাচ সংহতি প্রকাশ করেছে। আবার অনেকে বর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
জানা যায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সম্মতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোল তৈরি করে ব্যাচের পক্ষ থেকে ‘এ ঘোষণা দেয় বিভিন্ন বিভাগ ও ব্যাচের ক্লাস প্রতিনিধিরা (সিআর)। তারা আগামীকাল রোববার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে এ কর্মসূচি পালন করবেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলে শিক্ষকেরা তাদের আন্দোলন শেষ করে যদি ক্লাসে ফিরেন, তবুও শিক্ষার্থীরা কেউ ক্লাসে ফিরবেন না। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের এ সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ দাবি আদায়ের পূর্বে ক্লাসে ফিরলে ওই শিক্ষার্থীকে বয়কট করারও কথা জানায় কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টের ক্লাস প্রতিনিধিরা।
এসব নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন নিয়ে নিজ নিজ ব্যাচের সমর্থনের কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনসংযোগ চালিয়ে যেতে দেখা যায়।
চলমান সব ব্যাচ সংহতি জানিয়েছে এমন বিভাগ ও ইনস্টিটিটউটের সংখ্যা ৪৭টি। বিভাগগুলো- ইতিহাস, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন, বাংলা, ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি, সংস্কৃত, লোকপ্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, জাপানিজ স্টাডিজ, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা, অপরাধ বিজ্ঞান, পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ, ভাষাবিজ্ঞান, পপুলেশন সায়েন্সেস, সংগীত, চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, অর্গানাইজেশন স্ট্রাটেজি অ্যান্ড লিডারশীপ, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন ও নৃত্যকলা বিভাগ।
এ ছাড়া রয়েছে পদার্থবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, ফলিত গণিত, সমুদ্রবিজ্ঞান, বোটানি, প্রাণিবিদ্যা, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স, রসায়ন, গণিত, মৎস্যবিজ্ঞান, একাউন্টিং অ্রান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, হিসাববিজ্ঞান ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। পাশাপাশি ইনস্টিটিউটের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা ও সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।
অন্যদিকে কোনো কোনো বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ব্যাচ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে এমন সংখ্যা ১৬টি। ব্যাচগুলো হলো- ইংলিশ ফর দ্য স্পিকার্স অব আদার ল্যাংগুয়েজের ৬, ৭ ও ৮তম, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসের ১৪, ১৭ ও ১৮তম, নৃবিজ্ঞানের ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১তম, ফুটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৩৯, ৪০ ও ৪১তম, ভূগোল ও পরিবেশের ৬৬, ৬৭ ও ৬৮তম, উন্নয়ন অধ্যয়নের ১৪, ১৫ ও ১৬তম, পরিসংখ্যানের ৭০, ৭১ ও ৭২তম টেলিভিশন, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭তম, মনোবিজ্ঞানের ৫৬, ৫৭ ও ৫৮ তম, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের-৯ ও ১১তম, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফির ৯ ও ১০তম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৩, ১৪তম ব্যাচ, লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৪০তম, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৪০তম আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ৭৪তম এবং আবহাওয়া বিজ্ঞানের ২য় ব্যাচ।
গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে টানা তৃতীয় দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’এর মুখপাত্র নাহিদ হাসান।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা অনলাইন এবং অফলাইনে জনসংযোগ চালিয়েছি। ঢাবি থেকে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। এ পর্যন্ত ৪৭টি বিভাগের সব ব্যাচ আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, এখনো অনেক ব্যাচ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি। এমনকি আনন্দমোহন কলেজ থেকেও ক্লাস বর্জনের কথা আমরা জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত পুরো দেশের চিত্রের হিসেব আমাদের হাতে পৌঁছায়নি।