কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘মৌন সমাবেশ’ বুয়েট শিক্ষার্থীদের - দৈনিকশিক্ষা

কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘মৌন সমাবেশ’ বুয়েট শিক্ষার্থীদের

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

কোটা সংস্কারের দাবিতে ও শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ১৩ মিনিটের ‘মৌন সমাবেশ’ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে বারোটা তেতাল্লিশ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এ মৌন সমাবেশ করেন তারা। 

এ সময় সাংবাদিকরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা মিডিয়ার সামনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রেস রিলিজে তাদের সম্মিলিত দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা বাতিলের পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এর ফলে সারা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সরকারি কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তার উদ্রেক ঘটে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়: ১. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন, তখন তিনি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং নারীদের জন্য যথাক্রমে ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করেন। কেনোনা, মুক্তিযুদ্ধে তখন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেকে শহীদ হওয়াতে তাদের পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারায়। পাক হানাদার বাহিনী অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলে। অনেকে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে হারান, অনেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এমতাবস্থায়, তখন বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য জাতির জনকের ৩০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা প্রদান করা সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো। তা ছাড়া তৎকালীন নারী শিক্ষায় এই জনপদ অনগ্রসর ছিলো। যেসব নারী পড়াশোনা করেছেন তারাও অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পড়ালেখা করতে পেরেছেন। সেজন্য তাদের জন্যও কোটা থাকা জরুরি ছিলো। 

পরবর্তীতে মাঝে কোটা সুবিধা বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়াতে অনেক মুক্তিযোদ্ধার চাকরিতে প্রবেশের বয়স পেরিয়ে যায়। যার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পর্যন্ত কোটা সুবিধা প্রদান করা যৌক্তিক ছিলো।

তবে বর্তমান সময়ে এসে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার স্বচ্ছল জীবনযাপন করছে। তাদের পরিবারের নাতি-নাতনিদের পূর্বের অনগ্রসর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা লাগেনি। এক্ষেত্রে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা বিবেচনা করে ওদের সুবিধার্থে এবং মেধার স্বার্থে পূর্বের কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা বাধ্যতামূলক।

২. ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী নারীদের সাক্ষরতার হার ছিলো ৩১ শতাংশ এবং ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ছিলো ৫১ শতাংশ। সেখানে বর্তমানে মেয়েদের সাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭৩ শতাংশ। দেশের সাক্ষরতার হার ৭৬.০৮ শতাংশ।  এ থেকে এটা বলা যায় যে, দেশে নারী শিক্ষায় ও যোগ্যতায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। নারীরা তাদের আত্মমর্যাদা ও অধিকারের প্রতি যথেষ্ট সচেতন। এমতাবস্থায়, ১০ শতাংশ নারী কোটা বজায় রাখা আত্মমর্যাদাশীল নারীদের প্রতি অসম্মানজনক। এমনকি আমাদের মাঝে উপস্থিত নারীরা কেউই নারীদের জন্য এই বিশেষ কোটা সুবিধা চায় না। তাই নারী কোটাও সংস্কার করা উচিত।

৩. পূর্বে দেশের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বেশ কিছু প্রত্যন্ত জেলা ছিলো যারা অনগ্রসর ছিলো। যার জন্য ১০ শতাংশ জেলা কোটা রাখা হয়েছিলো। বর্তমানে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে সারা দেশ এখন একমঙ্গে কানেক্টেড। তা ছাড়া টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রত্যন্ত জেলা বলতে কার্যত কিছু থাকছে না। তাই এখানেও ১০ শতাংশ কোটা রাখা ভিত্তিহীন।

৪. কোটা সংস্কারের পর বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত/ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে না পাওয়া গেলে সে জায়গাগুলোতে মেধার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।

৫. একটি বিশেষ কোটাকে যাতে কোনো ব্যক্তি তার জীবনের ধাপে ধাপে সুবিধা ভোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের সঠিক অবকাঠামো গঠন করার আবশ্যক।

৬. কালের বিবর্তনে বাংলাদেশ এখন স্মার্ট আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে প্রতিনিয়ত মেধাবীরা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে আসছে। তার মানে মেধা ও মননের দিক দিয়ে দেশ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। যার ফলে আগামীর বাংলাদেশের কান্ডারি হবে দেশের মেধাবীরা। সেজন্য মেধার সর্বাত্মক সুযোগ বজায় রাখা কাম্য। তাই মেধাই হোক সবচেয়ে বড় কোটা। এতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এ বিজ্ঞপ্তিতে আরো হয়, দেশের সর্বস্তরে কোটা সংস্কার বিষয়ক যেসব আন্দোলন হচ্ছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করছি এবং মহামান্য আদালতের প্রতি মেধার মূল্যায়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে অতি দ্রুত রায় প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার ইস্যুতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকলে বুয়েট শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো শূন্য। ফলে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের - dainik shiksha হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস - dainik shiksha নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর - dainik shiksha অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072200298309326