মাধ্যমিকের পরই ভারতের লাখ লাখ শিক্ষার্থী কোটার টিকিট কাটে। রাজস্থানের এ শহর শিক্ষামহলের কাছেই অতি পরিচিত নাম। ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যাল প্রবেশিকার প্রস্তুতির জন্যই এই শহরে পা রাখেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ছাত্রদের আত্মহত্যার জন্য আলোচিত হচ্ছে কোটার নাম। এক বছরে কোটা শহরেই ২৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটায় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমেই বাাড়ছে। আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে রাজস্থানের অশোক গেহলট সরকার কমিটি গঠন করেছিল। সে কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা করেছে। ছাত্র আত্মহত্যার প্রধান ছয়টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কোটা শহর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরিচিত। এই শহরে থাকা শিক্ষার্থীদেরর বেশিরভাগই ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যালের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ ছাত্রই জেইই এবং নিট-এর জন্য প্রস্তুতি নেয়। এ দু'টি পরীক্ষাকে দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে গণ্য করা হয়।
লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সুযোগ পায়। প্রকৃতপক্ষে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায় আসন সংখ্যা অনেক কম। এ কারণেই একটানা প্রস্তুতির পরও সুযোগ না পেয়ে বহু শিক্ষার্থীরা আত্মঘাতী পদক্ষেপ নেয়। অনেকেই এ চাপ নিতে পারে না।
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে রিপোর্টে বলা হয়েছে:
কোটায়, শিক্ষার্থীরা জেইই এবং নিট-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ দু'টি পরীক্ষার সিলেবাস বড় এবং কঠিন। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার অনেক চাপ থাকে। এ চাপের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওপর অভিভাবকদের প্রত্যাশার বোঝাও থাকে। যা শিক্ষার্থীদের জন্য বিপজ্জনক। আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ এটি।
কমিটি বলেছে, শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের থেকে অনেকটা সময় দূরে থাকে। এটাও আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। এ ছাড়া সঠিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় পড়ুয়ারা মানসিক চাপ সামাল দিতে পারে না। তাদের আচরণে কোনও পরিবর্তন হলেও নজরে পড়ে না। আর এ কারণেই অনেক সময় শিক্ষার্থীরা এ পদক্ষেপ নেয়।
কোচিংয়ে নেওয়া পরীক্ষা এবং সেসব পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাচ নির্ধারণ করা হয়। কমিটির মতে, এ কারণে শিশুদের ওপর মানসিক চাপ থাকে এবং অনেক সময় তারা ভুল পদক্ষেপ নেয়।
কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, কোচিং ইনস্টিটিউটের ব্যস্ত ক্লাস শিডিউল এবং তাদের বিশাল সিলেবাসও শিশুদের আত্মহত্যার কারণ হচ্ছে।
এদিকে কোচিং ক্লাসগুলোতে ছুটি নেই। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। আর সেটাই আত্মহত্যার বড় কারণ বলে দাবি করা হয়েছে কমিটির রিপোর্টে। কমিটির মতে, পড়াশোনার চাপের মাঝে ছুটি না থাকায় মানসিক চাপের মধ্যে থাকে শিক্ষার্থীরা।