ক্যাডেট কলেজে খরচ যেনো বাধা না হয় - দৈনিকশিক্ষা

ক্যাডেট কলেজে খরচ যেনো বাধা না হয়

মাছুম বিল্লাহ |

ক্যাডেট কলেজ একটি বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানকার ভর্তি প্রক্রিয়া, শিক্ষাদান পদ্ধতি ও ধরন, প্রশিক্ষণ, শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যাবলি পরিচালনা, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলা বিষয়ক কর্মকাণ্ড অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা। প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ, পুরোপুরি আবাসিক এবং একাডেমিক কার্যাকলাপের মতো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক্সট্রা ও কো-কারিকুলার ক্যাডেট কলেজগুলোকে অন্যন্যতা দিয়েছে। যদিও অনেকেরই ধারণা, এখানে শুধু লেখাপড়াই হয়। পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল দেখে অনেকে তাই মনে করেন।

আসলে সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পুরো সময়টিকে বলা হয় প্রশিক্ষণ। একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ছয় বছর অতিবাহিত করতে হয়। সামরিক ও বেসামরিক সেক্টরে যোগ্য কর্মকর্তা তৈরির লক্ষ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের দেশে ক্যাডেট কলেজের যাত্রা শুরু। ব্রিটিশ পাবলিক স্কুলের আদলে এখানকার লেখাপড়া ও প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালিত হতো। প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন স্যার উইলিয়াম মরিস ব্রাউন। এই ক্যাডেট কলেজের সাফল্য ও শিক্ষাদানের ধারা প্রশংসিত। তৎকালীন কর্তৃপক্ষ ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ঝিনাইদহ, ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে মির্জাপুর এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি গার্লস ক্যাডেট কলেজসহ মোট বারোটি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। এখানকার লেখাপড়া কিন্তু শ্রেণিকক্ষেই, রাতের পড়াও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়। সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসনের সমন্বয়ে এখানকার প্রশাসন। এটিও এক ধরনের ব্যতিক্রম। শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের হাউস থেকে একাডেমিক ব্লকে আসা-যাওয়া করেন, ডাইনিং হলে কীভাবে একসঙ্গে সবাই খাবার গ্রহণ করেন এর সবগুলোর মধ্যেই রয়েছে আলাদা ধরনের শিক্ষা যা বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুপস্থিত। একটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয় যেখানে সব ধরনের কার্যবালির উল্লেখ থাকে এবং সমস্ত ক্যাডেটকে সব ধরনের খেলাধুলার সঙ্গে পরিচিতি থাকতে হয়, অংশগ্রহণ করতে হয়। সব ধরনের সাংষ্কৃতিক কর্মকাণ্ডের চর্চা নিয়মিত হয়ে থাকে। এখানে শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারিত হয় অভিভাবকের আয়ের ওপর। সম্প্রতি এ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। 

তিনি বলেন, ১৯ ধাপে ক্যাডেট কলেজগুলোতে টিউশন ফি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মধ্যে ১৮ নম্বর ধাপে অভিভাবকের যদি এক লাখ টাকার ওপর আয় হয়, সেখানে টিউশন ফি দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। যেটা ৩০ শতাংশ বাড়ালে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দিতে হবে ২৬ হাজার টাকা। মাঝামাঝি পর্যায়ে অভিভাবকের ৪০ হাজার টকা যদি ইনকাম হয় তখন বাচ্চার জন্য তাকে দিতে হবে ১৬ হাজার ২৫০ টাকা, যা তার পুরো রোজগারের ৪০ শতাংশ। এ অবস্থায় টিউশন ফি না বাড়িয়ে বরং এটিকে আরো সহনীয় পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণের বিবেচেনা করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেন সংসদ সদস্য। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ক্যাডেট কলেজসমূহে ক্যাডেটদের টিউশন ফি ব্যতীত নিজস্ব আয়ের উৎস না থাকায় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে টিউশন ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকলেও তা বৃদ্ধি করা হয়নি। পরবর্তীতে সপ্তম শ্রেণির নবাগত ক্যাডেটদের টিউশন ফি ২০টি ধাপে বাড়ানো হয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ধাপে ফি ১৫০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ ধাপে ২৮ হাজার ৬০০ টাকা করা হয় যা পূর্বে ছিলো ২২ হাজার টাকা। 

ক্যাডেট কলেজের একজন সাবেক শিক্ষক হিসেবে আমি বলতে চাই, যে ক্যাডেট বাড়িতে মাটির সানকিতে ভাত খেতেন, সেই ক্যাডেটই কলেজে দেশের সর্বোচচ পর্যায়ের সেনা ও সিভিল অফিসারদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়াশুনা করেছেন, একই ডাইনিংয়ে কাটা চামচ দিয়ে খেয়েছেন, একই পোশাক পরে কৃতিত্বের সঙ্গে কলেজ থেকে পাস করে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছেন। এই হচ্ছে ক্যাডেট কলেজ! সেই বিষয়টি যেনো এখনো থাকে অর্থাৎ মেধাবীরা অভাবে যাতে এখানকার আদর্শ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন। 

আমরা দেখেছি, দরিদ্র এক ছাত্রের বাবা এলাকায় চাঁদা তুলে নামমাত্র ফিতে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছেন, সে ক্যাডেট বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও  সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান তার ক্যাডেট কলেজে পড়ার ইতিহাস নিজেই লিখেছেন। তার লেখা থেকে আমরা জানতে পেরেছি,  এলাকার স্থানীয় মার্কেটের ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা চাঁদা তুলে তার অর্থের খরচ জুগিয়েছিলেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য। আর তৎকালীন অধ্যক্ষ তার কলেজে ফি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিয়ে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে মওকুফ করে তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছিলেন।  

সেই ব্যবস্থা যাতে এখনো থাকে সেটিই আমাদের কাম্য। অর্থাৎ দেশের মেধাবীরা যাতে এখানে আগের মতোই পড়তে পারেন, অর্থনৈতিক সমস্যা যাতে তাদের পড়াশোনার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করছি।

 

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026810169219971