প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আশ্রয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ একর জমির ২০ একরজুড়েই গড়ে উঠেছিল অবৈধ বস্তি, যা উচ্ছেদে দীর্ঘ ১৫ বছরে উদ্যোগ নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসন। তবে দেশের সামগ্রিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ বস্তি উচ্ছেদের কার্যকরী দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ৮৭ একর ক্যাম্পাসের ২০ একরের অধিক জায়গাজুড়ে বিদ্যমান থাকা এসব বস্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ভবনে ২৬০টি পরিবারকে অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়া হতো। অবৈধ এসব ভাড়া থেকে আসা অর্থের বড় একটি অংশ আওয়ামী সরকারের আমলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের পকেটে যেত বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বাসাভাড়ার একটি অংশ থেকে মাসিক এক লাখের অধিক পরিমাণ টাকা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দেওয়া হতো, যা সামগ্রিকভাবে আরো বেশি।
পরবর্তি সময়ে আওয়ামী সরকারের পতনের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর বস্তি উচ্ছেদের উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রশাসন এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ এবং অবৈধভাবে দখলকৃত সব স্থাপনা ও জমি ছেড়ে দেওয়ার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধভাবে ভাড়া থাকা ২৬০টি পরিবারের মধ্যে ১৯০টি পরিবার ইতিমধ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি অবহিত করেন যে, বস্তি সমস্যা সমাধানে আমরা শক্ত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে অধিকাংশ ভাড়ায় থাকা পরিবার ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে। বাকিরাও দ্রুতই ত্যাগ করবে। তবে অবৈধ এই বস্তি স্থাপন এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। আমরা দ্রুতই এ বিষয়েও পদক্ষেপ গ্রহণ করব এবং নিয়মের বাইরে গড়ে ওঠা সব বস্তি ভেঙে ফেলা হবে। অবৈধ বস্তি সমস্যা সমাধানে প্রশাসন অনড় অবস্থানে থাকবে।
মূলত অবৈধ এই বস্তিতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের মানুষ বসবাস করত, যা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিঘ্নের কারণ ছিল। বহিরাগত এসব ভাড়াটিয়ার মধ্যে অনেকেই সরাসরি মাদক সেবন ও বিক্রির কাজে সম্পৃক্ত ছিল। বিভিন্ন সময় এদের অনেকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ইভ টিজিংয়ের অভিযোগও পাওয়া যায়। তবে আওয়ামী সরকারের সময় রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রভাব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে অবৈধ এই বস্তি ক্যাম্পাস থেকে দীর্ঘ ১৫ বছরেও উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্তি সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এই সমস্যার ভুক্তভোগী ছিল। আমরা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ক্যাম্পাস সংস্কার এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের দিকে আমাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার থাকবে।